শেষের পাতা

২৬টি সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে খুন

পরিবার নাম দিলেও অজ্ঞাতদের নিয়ে তদন্তে পুলিশ

মারুফ কিবরিয়া

২৫ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর মহাখালী দক্ষিণপাড়া মসজিদ এলাকায় খুন হওয়া ঠিকাদার নাসির কাজীর হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ২৮টি দিন কেটে গেছে। নিহত নাসির কাজীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করছে না পুলিশ। এমনকি তাদের দেয়া কোনো ক্লু পুলিশ আমলে নিচ্ছে না। একই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশের এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথাও বলছেন খুন হওয়া নাসিরের মেয়ে নার্গিস আক্তার নিপু। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে নিপু বলেন, প্রশাসন আমাদের কোনো সাহায্য করছে না। বাবা খুন হওয়ার ২৮ দিন কেটে যাওয়ার পরও খুনিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। আমি মামলায় নাম উল্লেখ করলেও সেখান থেকে তা বাদ দিয়ে পুলিশ মনগড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি গ্রহণ করে। গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি সকালে মহাখালী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের পাশে দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়ে নাসির কাজীকে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের আগে ওই এলাকায় থাকা ২৬টি সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেয় খুনিরা।
ঘটনার সময় নাসিরের বুক, পেট, হাত-পাসহ দেহের বিভিন্ন অংশে নয়টি গুলি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দিনই বনানী থানায় একটি মামলা করেন নিহতের মেয়ে। খুনের ঘটনার প্রমাণ না পাওয়ার জন্য হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা ২৬টি সিসি ক্যামেরার সংযোগ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে দাবি করেন নিপু। নিপু বলেন, বাবা বেঁচে থাকতে বিভিন্ন সময় আমাদের বলেছেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও দেশের বাইরে থাকা ব্যবসায়ী মিন্টু সরদার তাকে খুন করতে পারে। ২০০৪ সালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে পুলিশ কর্মকর্তার বাবা শরীয়তপুরের ইদুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বি এম আবদুল খালেক খুন হন। ওই খুনের মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি ছিলেন আমার বাবা। তিনি অভিযোগ করেন, আবদুল খালেক বেঁচে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে দুদক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ করেছিলেন আমার বাবা। এতে খালেকের পরিবারের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। খালেক খুন হলে বাবাকে রাজসাক্ষী করতে চাইলে এতে তিনি রাজি হননি। তখন বাবাকে ওই মামলার ১০ জন আসামির মধ্যে নয় নম্বর আসামি করা হয়। পরে তাকে এক নম্বর আসামি দেখিয়ে ওই মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। ১৪ মাস জেলে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি আসা শুরু হয়। শুধু তাই নয়। শরীয়তপুরে বাবা বাড়িতে গেলে একদিন তার ওপর হামলার ছকও আঁকা হয়। পরে গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি নাসির কাজী খুন হন। নিপু আরো বলেন, বাবা হত্যাকাণ্ডের ২০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ডিবির লোকেরা আসে। মিন্টো রোড থেকে এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে ডিবির সদস্যরা চলে আসতে পারলো, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে এই খুনের মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে বাদী বলেন, আমাকে কোনো কিছু না জানিয়ে মামলাটি হঠাৎ করে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। যেখানে ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত, যিনি বাবাকে হত্যার মূলনায়ক, সেখানে এই মামলা স্থানান্তর করে ন্যায় বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিপু বলেন, ঘটনার দিন সকাল থেকে সিসি ক্যামেরাগুলো বন্ধ ছিল। কিন্তু ক্যামেরা এমনভাবে সেট করা যেন সামনেরটা বন্ধ করতে গেলে পেছনের দিক থেকে কে বন্ধ করছে তা ধরা পড়ে যাবে। তার মানে সিসি ক্যামেরা যেখান থেকে অপারেট করা হয় সে দোকান থেকেই বন্ধ করা হয়েছে। আমরা পুলিশকে এই ক্লুও দিয়েছি। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। পুলিশ সিসি ক্যামেরার দায়িত্বে যে দোকানদার রয়েছে তাকে ধরে নিলেই সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু সেটাও করছে না।
নাসির কাজীর স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, আমরা অনেক অসহায়। আমাদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। পুলিশের কাছ থেকে মামলা চলে গেল ডিবিতে। এটা নিয়ে নাটক চলছে। আমরা সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। পুলিশ যদি আমাদের সাহায্য না করে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাবো।
এ বিষয়ে বনানী থানায় মামলা থাকাকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা সায়হান ওলিউল্লাহ জানান, মামলাটি এখন আর বনানী থানায় নেই। সেটি ডিবি তদন্ত করছে। নাসির কাজী হত্যার বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমি বেশ কিছুদিন ট্রেনিংয়ে ছিলাম। এখনো ডিবিতে যাইনি। গেলে এ মামলার বিষয়ে কথা বলতে পারবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status