দেশ বিদেশ
সাহিত্যকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা যায় না: আনিসুজ্জামান
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
২৪ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
সাহিত্যকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা ও ভাগ করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা যখন বাংলার শিক্ষার্থী হিসেবে বৈষ্ণব পদাবলি মুখস্থ করি, তখন ধর্মের পরিচয় দিয়ে সাহিত্য পড়ি। তখন পরস্পর বিরোধিতা আমাদের মধ্যে চলে আসে। যদিও সাহিত্য ধর্মীয় চিহ্নিত হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ধর্মকে বিশ্বাস করে যে সাহিত্য রচিত হয়েছে, তার পরিচয় দিতে গিয়ে আবার ধর্মের কথা চলে আসে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফ্ফর আহমেদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আবুল মনসুর আহমেদের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আবুল মনসুর আহমেদের খোঁজে: বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে তর্কের সূত্র ধরে’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে যৌথভাবে আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পরিষদ এবং জ্ঞান তাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন ও রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট। আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রাবন্ধিক ও আলোচক হায়াৎ মাহমুদ, মোহাম্মদ শফিউল আলম। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আবুল মনসুর আহমেদের সঙ্গে বুদ্ধদেব বসুর যে বিতর্ক সেটি ১৯৪২ সালের দিকে। তখন পাকিস্তান আন্দোলন ও পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হয়ে গেছে। আর আবুল মনসুর আহমেদ পাকিস্তান আন্দোলনের একজন প্রবর্তক হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেছেন। তিনি এরপর ১৯৪৫ সালে পাকিস্তান আন্দোলনের যে সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা শুরু হয়েছে, সেখানে কিছু কথা বলেছিলেন। তার কিছু ব্যাখ্যা আমরা আজকের প্রবন্ধেও পেয়েছি। তিনি বলেন, পাকিস্তান আন্দোলনের একজন নেতৃত্বস্থানীয় পুরুষ হিসেবে আবুল মনসুর আহমেদ সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে আমরা বাংলাকে এক করে দেখবো, না ভাগ করে দেখবো- এটা একটা প্রশ্ন। আমরা যদি বাংলাকে এক করে দেখতে চাই, তাহলে ওখানে গিয়ে হোঁচট খাই। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আবুল মনসুর আহমেদ তার এক লেখায় বলেছেন, বাঙালি মুসলমান বাঙালি হিন্দুর চেয়ে আলাদা সাংস্কৃতিকভাবে। পাকিস্তানের অপরাংশের (পশ্চিম পাকিস্তান) ধারাটা এখান থেকে আলাদা। তিনি তখন প্রায় তিন জাতিতত্ত্বের কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানিরা এক জাতিসত্তা, ভারতের বাঙালিরা এক জাতিসত্তা ও পশ্চিম পাকিস্তানের এক জাতিসত্তা। এটা কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাবের কথা নয়। তার কথার অনেক পর্যালোচনা করে দেখলে- আমরা দেখি তিনি সামগ্রিকভাবে বাংলাকে এক করে দেখেননি। আনিসুজ্জামান বলেন, অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতা থাকলে লেখা হয় না। ৪০’র দশকের পরে মুসলমান লেখকদের লেখাকে বাংলা সাহিত্য হিসেবে ধরে নেয়া শুরু হয়েছে। তখন অনেকে মুসলমান সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্য লেখেছেন। এগুলোকে বাংলার প্রকাশ হিসেবে ধরে নিতে হবে। আলাদাভাবে ভাবার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এ ধরনের আলোচনা আবুল মনসুর আহমেদকে ভালো করে বুঝতে সহায়ক হবে। মোহাম্মদ আজম তার প্রবন্ধে বলেন, বুদ্ধদেব বসুর প্রবন্ধে তার সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক মতের প্রত্যক্ষ, আর রাজনৈতিক মতের পরোক্ষ প্রতিফলন আছে। আর আবুল মনসুর আহমেদের ক্ষেত্রে আছে তার নিজের চিন্তার সামগ্রিক প্রতিফলন।