শেষের পাতা

দুই মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় জালালের স্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

সন্ত্রাসী ধরতে গিয়ে গুলিতে মারা যাওয়া ডিবির পরিদর্শক জালাল উদ্দিনের দুই মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার স্ত্রী বীণা পারভিন। স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি অনেকটা মুষড়ে পড়েছেন। গত সোমবার রাতে সন্ত্রাসী ধরতে গিয়ে সন্ত্রাসীর ছোড়া গুলিতে মারা যান ডিবি পরিদর্শক জালাল উদ্দিন। সেদিন সন্ধ্যায় স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। বীণা পারভিন বলেন, তার (জালাল উদ্দিন) সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে সোমবার সন্ধ্যায়। কিছুদিন আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন জালাল উদ্দিন। প্রেসারের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। স্কয়ার হাসপাতালের এক ডাক্তারের নির্দেশনায় ওষুধ সেবনও করতেন তিনি। নিয়মিত  ওষুধ সঙ্গে করে নিলেও সোমবার নেননি। পারভীন আরো বলেন, আমাকে সন্ধ্যায় কাজে যাওয়ার আগে ফোন করে বললেন ‘ওষুধগুলো তো আনলাম না’। তারপর থেকে চিন্তায় পড়ে গেলাম। কি হবে হবে  করছিলাম। পরে আবার ফোন করে বললো বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খেয়েছি। কখন ফিরবে জানতে চাইলে বলেন, রাত হবে। এই তো শেষ কথা। এরপরের ঘটনা বলতে গিয়ে পারভিন বলেন, সকালে মেয়েদের নিয়ে স্কুলে পৌঁছে দেয় জালাল উদ্দিন। তাই রাতে যেভাবেই হোক বাসায় চলে আসে। আমিও অপেক্ষায় ছিলাম। বাসার দারোয়ানের কাছ থেকে গেটের চাবিও নিয়ে রেখেছি। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও আসছিল না। হঠাৎ রাত একটার দিকে একটি ফোন আসে। বলা হয় জালাল মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। আমাদের স্কয়ার হাসপাতালে যেতে বলে। আমি ভেবেছি তার তো হাইপ্রেসার। হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে গেছে ওই জন্যই। কিন্তু পরে ওখানে গিয়ে দেখি সে আর নাই। গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিহত জালাল উদ্দিনের মরদেহ স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়। ওই রাতে ঝিনাইদহে তার নিজ গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে নিহত জালাল উদ্দিনের মৃত্যুর পর সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠার কথা জানালেন তার ভাই আলাউদ্দিনও। তিনি বলেন, জালাল আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু খুব চিন্তার বিষয় হলো তার দুইটা বাচ্চা। ওরা পড়াশোনা করে। তাদের কি হবে!  নিহত জালালের বড় মেয়ে তৃপ্তি ভিকারুননেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট মেয়ে তূর্যা একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর  গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের পল্লবী জোনাল টিমের সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে মধ্য পীরেরবাগের একটি বাড়িতে যান জালাল উদ্দিন। তারা সেখানে গেলে সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। এ সময় জালাল উদ্দিনের মাথায় গুলি লাগে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা  মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওহিদুজ্জামান বলেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বাকি আসামিদেরও ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।  ২০১৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার জন্য জালাল উদ্দিনকে প্রেসিডেন্ট পদক পিপিএম সেবা দেয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই পদক পরিয়ে দেন তাকে। আর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই সন্ত্রাসীদের গুলিতে জীবন দিতে হলো জালাল উদ্দিনকে। ১৯৮৯ সালে কনস্টেবল পদে পুলিশে যোগ দেন তিনি। রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়ার সময় জালাল উদ্দিন উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন। রাজধানীর ওয়ারী থানায় দীর্ঘদিন থাকার পর দুই মাস আগে পদোন্নতি পেয়ে জালাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন। নিহত এই পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের ভোলপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত বিশারত মণ্ডল ও মা আয়েশা খাতুনের ছেলে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status