এক্সক্লুসিভ

কমিটি স্থগিত, ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত

‘বেপরোয়া কক্সবাজার কলেজ ছাত্রলীগ’

রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে

২২ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

বেপরোয়া কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে এক সপ্তাহে তিনটি ঘটনার জন্ম দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে সংগঠনের নেতারা। অপকর্মের দায় এড়াতে কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেছে জেলা ছাত্রলীগ।
প্রথমত কলেজ প্রশাসনের স্বার্থবিরোধী একটি রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত করে ছাত্রলীগ। কলেজের ২নং রাস্তা নির্মাণের জন্য সাড়ে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও নির্দিষ্ট স্থানে রাস্তা নির্মাণ না করে কলেজের আওতাভুক্ত বিচারাধীন জায়গায় রাস্তা নির্মাণ করছিল প্রকল্প কমিটি।
কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এফাজ উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির প্লটে যাওয়ার সুবিধার্থে ওই স্থানে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। যা কলেজের কোনো কাজে আসবে না। স্থানীয় সরকারদলীয় নেতা শেখ ইয়াকবু আলীকে সভাপতি করে ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়। কমিটিতে ছাত্রলীগের কলেজ সভাপতি জাকির হোসেনসহ আরো কয়েকজনও রয়েছেন।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৭ই মার্চের। এদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী লাঞ্ছিত হন।
কাবেরী লাঞ্ছিত হওয়ার একদিন পর কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে লাঞ্ছিত হন অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের পাকড়াও করে লাঞ্ছিত ও অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয় এবং প্রশাসনিক ভবনের সরঞ্জাম ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কক্সবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, গণ্ডগোলের খবর পেয়ে একদল পুলিশ নিয়ে তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। শিক্ষক ও আন্দোলনকারী ছাত্রদের নিয়ে বৈঠকও করেন ওসি।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ১৭ই মার্চ কক্সবাজার সরকারি কলেজে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার জন্য আমার নাম ঘোষণা করলে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাখায়াত হোসেন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে অশালীন গালিগালাজ শুরু করে। ছাত্রলীগ নেতা শাখাওয়াত চেয়ার নিয়ে আমাকে মারতে আসে। এমনকি আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করার হুমকি দেয় ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা।
অপরদিকে কলেজকে অশান্ত করার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে তাদের শাস্তি দাবি করেছে কলেজ প্রশাসন এবং বিসিএস শিক্ষা সমিতি। শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ও কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল আলম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে উল্লিখ করা হয়েছে, গত ১৯শে মার্চ কক্সবাজার সরকারি কলেজের পার্শ্ববর্তী ভূমিদস্যু কর্তৃক লেলিয়ে দেয়া কিছু ছাত্রলীগ নামধারী উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র ও বহিরাগত যুবক কক্সবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং আটক ভূমিদস্যুদের মুক্তির দাবি জানায়। এ সময় তারা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সাধারণ শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষকের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এতে কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মচারী ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভূমিদস্যু কর্তৃক লেলিয়ে দেয়া উচ্ছৃঙ্খল বখাটেদের বর্বরোচিত হামলার জন্য কক্সবাজার সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কলেজের মূল্যবান সম্পত্তি রক্ষাসহ শিক্ষক, কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সম্পাদক ও কক্সবাজার সরকারি কলেজের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মফিদুল আলম বলেন, হামলাকারীরা ভিডিও এবং স্থিরচিত্রে শনাক্ত আছে।
এসব ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কলেজের চলমান সংকট নিরসন, কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সৃষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওইসব ঘটনাবলির সঠিক তথ্য উদঘাটনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কক্সবাজার জেলা শাখার পক্ষ থেকে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মইন উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে রিপোর্ট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি/সম্পাদক বরাবরে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ যথাক্রমে সহ-সভাপতি : ইসমাইল সাজ্জাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক : আব্দুল মজিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক : নাজমুল হাসান শাকিল, দপ্তর সম্পাদক : শাহ নিয়াজ, স্কুল বিষয়ক সম্পাদক: মেহেদী হাসান মুন্না, উপ-দপ্তর সম্পাদক : মইন উদ্দীন।
কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির হোসেন কলেজ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেত্রী কাবেরীর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লিখিত বক্তব্যে বলেন, কলেজের রাস্তা নির্মাণের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। ছাত্রলীগের নেতারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে আমরা আন্দোলনরতদের শান্ত করি।
কাবেরীর অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, কলেজের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন অনুষ্ঠান পালনকালে কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল করিমের ছোট ভাই আশমত উল্লাহসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে অনুষ্ঠানে অনুপ্রবেশ করেন ওই নেত্রী। ওই সময় তিনি জোর করেই মঞ্চে উঠে বক্তব্যরত শিক্ষকের কাছ থেকে স্পিকার কেড়ে নিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথা শুরু করেন। ওই সময় শিক্ষকের কাছ থেকে স্পিকার কেড়ে নেয়ায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাকে মঞ্চ থেকে নামতে বলেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তাকে তাড়া দিলে তিনি কলেজ ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status