শেষের পাতা

৩৮ আসনের সীমানা পুনর্গঠনের প্রস্তাব

সিরাজুস সালেকিন

১৫ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন

একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৬ জেলার ৩৮টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে পুনর্বিন্যস্ত নির্বাচনী এলাকার খসড়া করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার ২১তম কমিশন সভায় সীমানা পুনর্গঠনের খসড়া অনুমোদন করা হয়। বুধবার এই তালিকা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়। কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, খসড়া নিয়ে কোনো দাবি আপত্তি থাকলে ১লা এপ্রিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। কমিশন দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ৩০শে এপ্রিল সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে। ইসি সূত্র জানায়, ঢাকার ৫টি, নারায়ণগঞ্জের ২টি, নীলফামারীর ২টি,  রংপুরের ৩টি, কুড়িগ্রামের ২টি, পাবনার ২টি, মাগুরার ২টি, খুলনার ২টি, সাতক্ষীরার ২টি, জামালপুরের ২টি, শরীয়তপুরের ২টি, মৌলভীবাজারের ২টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২টি, কুমিল্লার ৪টি, নোয়াখালীর ২টি এবং চট্টগ্রামের ২টি আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। খসড়ায় দশম সংসদের ২৬২টি আসনের সীমানা পুনর্বহাল রাখা হচ্ছে। প্রশাসনিক ইউনিট বিশেষ করে উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন ওয়ার্ডের যথাসম্ভব অখণ্ডতা বজায় রাখা হয়েছে সীমানা পুনঃনির্ধারণে। ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর এলাকার ওয়ার্ড একাধিক সংসদীয় আসনে বিভাজন রোধ করা হয়েছে নতুন সীমানায়। যে সব প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি হয়েছে বা সম্প্রসারণ হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে তা নতুন সীমানায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছিটমহল বিনিময়ের কারণে নতুন করে কিছু এলাকা কয়েকটি আসনে যুক্ত হয়েছে। সীমানা পুনর্গঠন পদ্ধতিতে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যথাযথ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সংলাপে আওয়ামী লীগ দশম সংসদের সীমানা বহাল রাখার দাবি করে। অন্যদিকে বিএনপি ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবি করে আসছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পরদিনই প্রস্তাবিত পুনর্গঠিত এলাকার খসড়া প্রকাশ করলো ইসি। প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য জানান, বৈঠকে সীমানার বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে ইসির সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয় নি। নির্বাচন কমিশনের ২১তম কমিশন সভা বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সীমানা পুনঃনির্ধারণের অগ্রগতি প্রতিবেদন বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল। ১৯শে মার্চ কমিশনের ২২তম সভায়ও একই বিষয়ে এজেন্ডা ছিল। গেল বছর ১৬ই জুলাই ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মধ্যে সীমানা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারে নি। পরিকল্পনার আড়াই মাস পর খসড়া প্রকাশ করলো ইসি। রোডম্যাপে সিইসি বলেছিলেন, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নতুন আইন করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। সবার সঙ্গে আলোচনা করেও নতুন আইন প্রণীত হয় নি। সীমানা পুনঃনির্ধারণের জন্য পরামর্শও নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু এখন ছোটখাটো পরিবর্তন করেই খসড়া করে দিলো নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। ২০১১ সালে সর্বশেষ পঞ্চম আদমশুমারি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিদ্যমান অধ্যাদেশ অনুযায়ী জনসংখ্যার যথাসম্ভব সমতা রেখে দশম সংসদ নির্বাচনে আদমশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসন বিন্যাস করা হয়। পরবর্তী আদমশুমারির প্রতিবেদন হবে ২০২১ সালে। ইসি কর্মকর্তারা আগেই বলেছিলেন, প্রস্তাবিত আইন পাস হলে একাদশ সংসদ নির্বাচন বিদ্যমান সীমানাতেই হতে পারবে। শুধু বিলুপ্ত ছিটমহল ও নতুন উপজেলা বা প্রশাসনিক কিছু এলাকা সংসদীয় আসনে যুক্ত করলেই চলবে। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনার দরকার পড়বে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। তবে ১৯৮৪, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে ১৩৩ সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। দশম সংসদে ছয়টি নীতিমালা অনুসরণ করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়।

যে ৩৮টি আসনের সীমানা পুনর্গঠনের প্রস্তাব এসেছে: জলঢাকা উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে নীলফামারী-৩ আসন, কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে নীলফামারী-৪ আসন; ওয়ার্ডকে অখণ্ডিত রাখার জন্য গঙ্গাচড়া উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর-১ আসন; রংপুর সদর উপজেলা এবং ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড ব্যতীত বাকি সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে রংপুর-৩ আসন; পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে রংপুর-৪ আসন; উলিপুর উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে কুড়িগ্রাম-৩ আসন; চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে কুড়িগ্রাম-৪ আসন; মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে মাগুরা-১ আসন; মহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে মাগুরা-২ আসন; খুলনা সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং দিঘলিয়া উপজেলার আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন নিয়ে খুলনা-৩ আসন; আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন বাদে বাকী দিঘলিয়া উপজেলা এবং রূপসা ও তেরখাদা উপজেলা নিয়ে খুলনা-৪ আসন; আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে সাতক্ষীরা-৩ আসন; শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে সাতক্ষীরা-৪ আসন; সরিষাবাড়ী উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে জামালপুর-৪ আসন; জামালপুর সদর উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে জামালপুর-৫ আসন; কেরানীগঞ্জ উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে ঢাকা-২ আসন; সাভার উপজেলার সাভার থানার অন্তর্ভুক্ত সাভার, বিরুলিয়া, তেঁতুলঝোড়া, বনগাঁও, ভাকুর্তা, আমিনবাজার, কাউন্দিয়া ও সাভার পৌরসভা নিয়ে ঢাকা-৩ আসন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩ থেকে ৩৩, ৩৫, ৩৬, ৫৫, ৫৬, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা-৭ আসন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা-১৪ আসন; সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত শিমুলিয়া, ধামসোনা, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, পাথালিয়া ও সাভার ক্যান্টনমেন্ট ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-১৯ আসন; আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন ব্যতীত নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন; নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন, বন্দর উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন; নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে শরীয়তপুর-২ আসন; ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে শরীয়তপুর-৩ আসন; নবীনগর উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসন; বাঞ্ছারামপুর উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসন; দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে কুমিল্লা-১ আসন; হোমনা ও মেঘনা উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে কুমিল্লা-২ আসন; কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে কুমিল্লা-১০ আসন; সুবর্ণচর ও নোয়াখালী সদর উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে নোয়াখালী-৪ আসন; কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে নোয়াখালী-৫ আসন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলাকে অখণ্ডিত রেখে চট্টগ্রাম-৭ আসন; বোয়ালখালী উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-৮ আসন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status