প্রথম পাতা

তালিকায় শিক্ষা প্রশাসনের আরো অর্ধশত কর্মকর্তা

বদলি আতঙ্ক

নূর মোহাম্মদ

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

শিক্ষা প্রশাসনে চলছে বদলি আতঙ্ক। বৃহস্পতিবার নানা অনিয়ম সিন্ডিকেটে জড়িত কর্মকর্তাদের একযোগে বদলির আদেশ দেয়ায় এ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আরো অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন বদলি তালিকায়। আগামী সপ্তাহে তাদের বদলির আদেশ হতে পারে।  সূত্র বলছে, বদলির দ্বিতীয় তালিকায় আছেন শিক্ষামন্ত্রীর পিএস নাজমুল হক খানের ভগ্নিপতি মনিরুল    
ইসলামসহ প্রভাবশালী ২৫ জন। যারা প্রেষণে বিভিন্ন দপ্তরে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করছেন। যাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও দীর্ঘদিন একই পদে কমর্রত আছেন, কেউই রক্ষা পাবেন না। অতি গোপনে তালিকাটি তৈরি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে শুরু হবে শুদ্ধি অভিযান।
কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষা প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এপিএস বাড়ৈ সিন্ডিকেট ছিল অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। ২০১৩ সালে বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে মন্ত্রীর দপ্তর থেকে সরিয়ে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ দিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়। এক সময়ে মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির হাট বসানো এই কর্মকর্তা বোর্ডে এসেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। আগের বারের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে ঢাকা বোর্ড থেকে রাজশাহীতে পাঠানো হয় তাকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার সূত্র মতে, দ্বিতীয় ধাপ বদলির তালিকায় আছেন শিক্ষামন্ত্রীর পিএসের ভগ্নিপতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার, মাউশির মনিটরিং ও ইভ্যুলয়েশন উইং-এর উপ-পরিচালক ড. মাহবুবা ইসলাম, মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান, সেসিপ প্রকল্পের উপ-পরিচালক এডমিন, উপ-পরিচালক প্রোগ্রাম, সহকারী পরিচালক এডমিনসহ সাত জন। যারা ১৩ থেকে ১৮ বছর ধরে এখানে কর্মরত। এক সময়ের দুর্নীতির দুর্গ হিসেবে পরিচিত পরিদর্শক ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল সালাম আজাদ, টুটুল কুমার নাথ, আবদুস সালাম, মনিরুল ইসলাম, কাওসার হোসেন ও সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক শ্যামা প্রসাদ সাহা রয়েছে বদলির তালিকায়। সম্প্রতি এই দপ্তরের ইমেজ উদ্ধার করেছেন এরকম দুই জন কর্মকর্তাকে বদলি না করতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে বলে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা যাতে বদলির খড়গে না পড়েন সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। শিক্ষা ক্যাডারের ড্যাম্পিং স্টেশন হিসেবে পরিচিতি জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। প্রথম দফায় আট জনের পর দ্বিতীয় দফায় সবচেয়ে বেশি বদলি করা হচ্ছে এখান থেকেই। দ্বিতীয় তালিকায় এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা ও সচিব প্রফেসর ড. নিজামুল করিমও রয়েছেন। এক বছর আগে সচিবকে কুমিল্লা থেকে এনসিটিবির সচিব করে আনা হলেও তার ওপর ক্ষুব্ধ শিক্ষা ক্যাডার ও মন্ত্রণালয়। এনসিটিবিতে চেয়ারম্যানের বাইরে আরেকটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। বিতর্কিত এই কর্মকর্তা শিক্ষামন্ত্রীর পিএস নাজমুল হক খানের ভগ্নিপতি। সে প্রভাবে তার পা মাটিতে পড়ে না। জানুয়ারি মাসে তা স্ত্রী তৌফিকা আক্তার এনসিটিবিতে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ওএসডি হয়েছেন। মনিরুল ও তা স্ত্রীর  কমিশন বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। কমিশন না দিলে কোনো প্রিন্টার্সের বিল ছাড়েন না মনিরুল। এমনকি একটি পত্রিকা অফিসের বিলও আটকে দেন মনিরুল। পরে মন্ত্রী ফোন দিয়ে সেটা ছাড়াতে হয়। এনসিটিবিতে সবাই তাকে জরিমানা মনিরুল বলে ডাকে। বই ছাপার প্রতিটি ধাপে তাকে ম্যানেজ করতে হয়। গত বছর তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান পিএ প্রিন্টার্সকে কাজ দিয়ে বিপাকে পড়ে এনসিটিবি। এই প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাগজ ছাপিয়ে উপজেলায় বিতরণ করার পর তা ধরা পড়ে। ইন্সপেকশন টিম ও এনসিটিবির অনুমোদন না দিয়ে বই ডেলিভারি করার পিএ প্রিন্টার্সকে শোকজ করা হয়। মনিরুল প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা জেনে গেলে পিছু হটেন মনিরুল। এরপর প্রতিষ্ঠানটির কাজ বাতিল করে অন্যদের দিয়ে বই ছাপার কাজ করানো হয়। চলতি বছর আবার এ প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন তিনি। তার প্রভাবে অতিষ্ঠ মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা মনিরুলকে এনসিটিবিকে সরিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু কাজ হয়নি। বহাল তবিয়তে থাকা প্রভাবশালী এই কর্মকর্তাকে বদলি করা হচ্ছে বলে সূত্রের দাবি। একাধিক মুদ্রণ ব্যবসায়ীর অভিযোগ, পুরো এনসিটিবিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন মনিরুল ও তার স্ত্রী। জানুয়ারি মাসে চা দিতে দেরি করায় মনিরুলের স্ত্রী অফিস সহকারীকে পেটান। এর প্রতিবাদ করায় ওই সংস্থার আরো পাঁচ কর্মকর্তাকে পেটান তিনি। এই ঘটনা ঘটনোর সময় সংস্থার চেয়ারম্যান-সদস্যসহ কারো অনুরোধই শুনেনি। এমন কাণ্ড ঘটানোর কারণে একপর্যায়ে এনসিটিবির সব ক্যাডার কর্মকর্তা ধর্মঘটে যান। ঘটনার প্রেক্ষিতে তৌফিকাকে ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বড় ভাই শিক্ষামন্ত্রীর পিএস আর সেই জোরেই তিনি এনসিটিবিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। প্রায় হরহামেশাই যার-তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। এর আগে আরো একাধিকবার তিনি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার চেয়ে এক ব্যাচ সিনিয়র এক কর্মকর্তাকে দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পান। এরপর জোর দেখিয়ে বদলি করে দেয়ার ভয়ও দেখান ওই কর্মকর্তাকে। বই ছাপার কাজে কমিশন নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের মোখলেছুর রহমান, মোছাব্বির হোসেন, মনির হোসেনসহ আরো ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।  
জানা গেছে, কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের আলোকে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৮৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩ জন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরো একটি বদলি আদেশ প্রকাশ করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আপনারা তো সবই জানেন। আমি কারো নাম বলতে চাই না। সময় হলেই দেখতে পাবেন। বদলি চলমান প্রক্রিয়া। এটি চলতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যেভাবে চেয়েছেন সেইভাবে বদলি শুরু করেছি। সামনে আরো হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status