এক্সক্লুসিভ

কাজের বুয়া রশিদা মর্জিনাদের কষ্টকথা

তামান্না মোমিন খান

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

সকাল শুরু হয় ভোর চারটায়। চুলার সিরিয়াল দিতে হবে ভোর সাড়ে চারটায়। এক ঘণ্টার মধ্যেই রাঁধতে হবে এক তরকারি আর ভাত। স্বামী-বাচ্চাদের খাইয়ে ছয়টার মধ্যে বের হতে হবে কাজের জন্য। দুই ঘণ্টা করে এক বাড়ির কাজ। ভোর ছয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ছয় বাড়ির কাজ করে রশিদা। কোথাও কাপড় ধোয়া, ঘরমোছা, থালা-বাসন মাজা আবার কোথাও রুটি বানানো, মাছ-তরকারি কুটার কাজ করে। কত তাড়াতাড়ি কাজ সারতে পারবে- সেই চেষ্টাই রশিদার। এক বাড়ির তরকারি কেটে ‘আফা একটু আসতেছি’ বইলা আরেক বাড়ির কাপড় ধুয়ে আসে। যে বাড়ির গৃহকর্ত্রী যত কম কাজ করায় সে বাড়ির গৃহকর্ত্রী তত ভালো তার কাছে। রশিদা বলেন, এক বাড়ির খালাম্মা অনেক ভালো। কি কাজ করি, না করি কিছু দেখেন না। খালাম্মা টিভিই দেখতে থাকে। আর কিছু বাড়ির মহিলারা শুধু খ্যাচখ্যাচ করে। আর একদিন ছুটি চাইলেই খেইপ্যা যায়। আমরা তো মানুষ। আমাগো তো শরীরে অসুখ-বিসুখ হয়। কিন্তু সেইডা তারা বুঝতে চায় না। ছয় বাড়িতে কাজ করে মাসে  দশ হাজার টাকা আয় করে রশিদা। এক কাজ ছয় শ’ টাকা করে। রশিদা বলেন, দুই কাজ তিন কাজের কথা বইলা অনেকে অনেক বেশি কাজ করায়। আবার অনেক বাড়িতেই মাসের পনের তারিখ হইয়া গেলেও বেতন দেয় না।  আমি বিকালে আর কাজ করি না। অনেক বুয়ারা আট-দশ বাড়িতে কাজ করে। তারা মাসে  পনের হাজার টাকা পর্যন্ত কামাই করে। মর্জিনা আট বাড়িতে কাজ করে মাসে চৌদ্দ হাজার টাকা আয় করে। রাতেও কাজ করে মর্জিনা। মেসে তিনবেলা রান্না করে। সকালে রুটি বানায়, দুপুরে ভাত-তরকারি রান্না আবার রাতে গিয়ে রান্না করে। এর ফাঁকে আরো ছয় বাড়িতে কাজ করে। মর্জিনা বলেন, প্রতিদিন সব বাড়িতে যাইতে ভালো লাগে না। এক বাড়িতে যাই তারপর অন্য বাড়ির মহিলা ফোন দিলে কই শরীরডা ভালো না। জ্বরে বিছানা থেইক্যা উঠতে পারি না। এভাবে দুই তিন সপ্তাহে একদিন কইরা এক বাড়ি বাদ দেই। কারণ ছুটি চাইলে কোনোদিন ছুটি দেয় না। সবার ছুটি আছে শুধু বুয়াদের ছুটি নাই। একদিন না গেলে বেটিদের মাথা গরম হইয়া যায়। আর ফোনের পর ফোন দিতে থাকে। হালিমা ত্রিশ বছর ধরে ঢাকায় বুয়ার কাজ করে। এখন বয়স ষাট বছর। বয়সের কারণে অনেকটাই দুর্বল। চোখেও কম দেখেন। তারপরও তিন বাড়িতে কাজ করেন। হালিমা বলেন, ‘কালে কালে কত কিছু দেখলাম। আগে আমরা দুই বাড়ির বেশি কোনদিন কাজ করি নাই। সকালে এক বাড়িতে গেলে সব কাজ সাইরা দুপুরে বাইর হইতাম। দুপুরে যে বাড়িতে যাইতাম  সেই বাড়ির কাজ শেষ কইরা বাইর হইতে হইতে সন্ধ্যা। বাড়িতে বেতন  পাইতাম তিনশ’ চারশ’ টাকা কইরা। আর এখন এক কাম চলে ছয়শ’ টাকা কইরা। কাজ করে ঘণ্টা ধইরা। আমরা যারা আগের বুয়া আছি তারা এভাবে কাম করতে পারি না দেইখা আমাগো টাকাও কম।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status