প্রথম পাতা

বিএনপি উন্নয়ন করতে পারে না লুটপাট করে খেতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত যেখানে সন্ত্রাস কায়েম করে, আওয়ামী লীগ সেখানে জনগণের জন্য উপহার নিয়ে আসে । আওয়ামী লীগ জনগণের উন্নয়নের কথা ভাবে। বিএনপি জামায়াত সরকার দেশবাসীকে লাশ উপহার দিয়েছে। বিএনপি উন্নয়ন করতে পারে না। শুধু লুটপাট করে খেতে পারে। গতকাল রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্‌রাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় ও সংসদ নির্বাচন হবে মার্কার নির্বাচন। আর সে মার্কাটা হচ্ছে নৌকা। সে নৌকা মার্কায় আপনাদের কাছে ভোট চাই, যে উন্নয়ন করছি তা যেন অব্যাহত থাকে। বাংলার মানুষ যেন খেয়ে পরে, শান্তিতে থাকতে পারে। এজন্য আপনাদের কাছে আবেদন করি আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করুন। নূহ নবীর আমল থেকে নৌকা মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। এই নৌকাই স্বাধীনতা দিয়েছিল। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজ দেশ উন্নত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা জনগণের স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছি, তারা সেটি পুড়িয়েছে। পুলিশ সদস্যকে রাস্তায় পিটিয়ে মেরেছে। আন্দোলনের নামে বাসে পেট্রোল দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় এসে রাজশাহী নগরীকে সন্ত্রাসের নগরীতে পরিণত করে। বাংলাভাই সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও হত্যা করে। শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। বিএনপি’র সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিভাবে মানুষ কষ্ট করেছে আমরা দেখেছি। রাজশাহীর ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে আমার দলের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শুধু তাই না বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই এলাকার ছোট্ট শিশুকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এই রাজশাহীতে তারা আপনাদের দিয়েছিলো লাশ উপহার।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা প্রসঙ্গটি। এই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার কথার প্রসঙ্গটি টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া জেলে গেছে। কেন জেলে গেছে? ৯১ সালে এতিমখানা তৈরি করবে বলে বিদেশ থেকে টাকা এনেছে। কিন্তু এতিমখানা কই? কেউ ঠিকানা জানে না। সেই টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। আজ বলে টাকা তো আছে, টাকা তো বেড়েছে। কিন্তু এই টাকা কে ভোগ করেছে?’

‘বিএনপি-জামায়াত যখন সরকারে ছিল পাঁচবার বাংলাদেশ বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমেরিকার ফেডারেল কোর্ট তার (খালেদা জিয়া) ছেলে (তারেক রহমান) যে চুরি করেছে, ঘুষ  খেয়েছে সে কথাটা তারাই বলেছে। সিঙ্গাপুর কোর্ট সেই একই কথা (আরাফাত রহমান কোকোর ঘুষ) বলেছে। এই টাকা দেশের কাজে লাগেনি, বিদেশে পাচার করেছে।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারী বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা আন্দোলন করে। কিসের আন্দোলন? চুরি করে নেত্রী জেলে গেছে। আন্দোলন চোরের জন্য?’ ‘এতিমের টাকা চুরি করে খাওয়া কোরআন শরীফেও নিষেধ আছে। কোরআন শরীফেও বলা আছে, এতিমের টাকা চুরি করো না, এতিমকে দাও।’ ‘২৭ বছরে এতিমের ভাগ এতিমকে দিতে পারে নাই। সেই টাকা তার নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। আর তারই শাস্তি আজকে সে ভোগ করছে।’

‘আমার একটাই প্রশ্ন, এতিমখানার ঠিকানাটা কোথায়? সেখানে কয়জন এতিম আছে, তার কোনো সংখ্যা নাই। এতিমরা কি একটা টাকাও পেয়েছে এ পর্যন্ত? পায় নাই?

‘তারা বলে এতিমের টাকা সুদে-আসলে বেড়েছে। কিন্তু সুদের টাকা খেয়েছে কে? ভোগ করেছে খালেদা জিয়া আর তার পরিবার আর দলের লোকজন। এতিমের তো ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। তাদেরকে বঞ্চিত করেছে। বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই কেয়ারটেকার সরকার তন্নতন্ন করে খুঁজেছে, কোনো অনিয়ম পায় কি না। কিন্তু তারা পায় নাই। আমি বলেছিলাম, আপনারা ভালোভাবে তদন্ত করে দেখেন।’

খালেদা জিয়া পরিবারের অঢেল সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ছিল টা কী? ৮১ সালে যখন জিয়া মারা গেলেন তখন বললেন, জিয়া পরিবারের কিছু নাই। আছে ভাঙা সুটকেস আর ছেড়া  গেঞ্জি। আজকে তারা শ’ শ’ কোটি টাকার মালিক কীভাবে জানি না। আজকে বিদেশেও টাকা পাচার করে। ‘কত কিছু করেছে, কোকো ওয়ান, কোকো টু থেকে কোকো ছয় পর্যন্ত লঞ্চ, ড্যান্ডি ডায়িং ইন্ডাস্ট্রি  থেকে কত কিছু করেছে। ব্যাংক থেকে নয়শ’ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা ফেরত পর্যন্ত দেয় নাই।

বেলা ২টায় জনসভা শুরু হয়। শুরুতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জনসভায় বক্তব্য রাখেন। বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে জনসভাস্থলে এসে মঞ্চের পাশে রাজশাহীর ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের নামফলকের ভিত্তিপ্রস্তরের উন্মোচন ও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ৩টা ৫৫ মিনিটে জনসভা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন এবং মঞ্চে উঠে জনতাকে হাত উঁচিয়ে অভিবাদন জানান। ৪টা ৩০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে ৪টা ৫৯ মিনিটে শেষ করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীয় সদস্য অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক ও অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আকতার জাহান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নূরুল ইসলাম ঠাণ্ডু প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে রাজশাহীতে ছিল উৎসবের আমেজ। ব্যানার ফেস্টুন ও তোরণে বর্ণিল সাজে সেজেছিল নগরী। দলীয় সভানেত্রীর সমাবেশ সফল করতে সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা যানবাহনে করে নগরীতে আসতে থাকেন। দুপুরের আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় ভরে যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status