বই থেকে নেয়া
উত্তম কুমারের অজানা কথা (৩০)
‘১৯৫১ সাল আমার জীবনটাকে যেন তছনছ করে দিল’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তম কুমার অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-
তারপর যখন আমি ‘সহযাত্রী’ ছবির নায়ক নির্বাচিত হলাম এবং কাজ শুরু করলাম, তখন আমার কাজ দেখে কি না জানি না বিভূতিবাবু আমাকে পোর্ট কমিশনার্সের চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। ঠিক তখনই চাকরিজীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে আনিনি বটে, তবে চাকরিটাকে যেন আমি ফাউ ভেবে নিলাম। একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ‘সহযাত্রী’ ছবিতে আমি কাজ করেছিলাম। ভাগ্যের বিড়ম্বনা কেউ কখনো খন্ডন করতে পারে না। আমিও আবার ভাগ্যকে অস্বীকার করতে পারলাম না।
এই ছবিতে আমার অরূপকুমার নাম ঘুচে গেল। ‘কামনা’য় ছিলাম উত্তম চ্যাটার্জি। তাও গুচে গেল। এবার আমি হলাম উত্তম কুমার। এই নামে ভূষিত করলেন বিমল ঘোষ।
১৯৫১ সালে মুক্তি পেল ‘সহযাত্রী’।
তখনকার দিনের বহু খ্যাতনামা শিল্পীর সঙ্গে নায়িকা হিসাবে প্রখ্যাত নায়িকা ভারতী দেবী থাকা সত্ত্বেও ‘সহযাত্রী’ও আশাতীত সাফল্য লাভ করল না। চলচ্চিত্র জগতের ভাষায় ছবিটি ফ্লপ হলো। এবার সত্যিই ব্যর্থতার আঘাতে আমি চূর্ণ-বিচূর্ণ। চোখে যেন রীতিমতো অন্ধকার দেখছি।
১৯৫১ সাল আমার জীবনটাকে যেন তছনছ করে দিল। আমি নিজেই নিঃশেষ হয়ে যাবার শেষ সোপানে যেন এসে দাঁড়ালাম। ইতিপূর্বে ‘ওরে যাত্রী’ নামে যে ছবিটিতে কাজ করেছিলাম সেটিও মুক্তি পেল এই বছরে।
শুধু তাই নয়, পশুপতিবাবুর ছবিটিও এই বছরেই মুক্তি পেয়েছিল।
বলা হয়নি, চলচ্চিত্র সাংবাদিক হিসাবে এখন পশুপতি চট্টোপাধ্যায়ের নাম অনেকেই জানেন আশা করি। এই পশুপতিবাবু একদিন ছিলেন চিত্রপরিচালক। তার ‘নষ্টনীড়’ ছবিতে আমি অভিনয় করেছিলাম।
সেই ছবির নায়িকা ছিলেন তদানীন্তন কালের স্বনামধন্য অভিনেত্রী সুনন্দা দেবী।
আমার জীবনের অভিশপ্ত ১৯৫১ সালের কয়েক মাসের ব্যবধানে পর পর তিনটি ছবি যেন আমার শিল্পচেতনার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির হলো আমার সামনে। তিনটি ছবিই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ব্যর্থ হলো।
আমার এতদিনকার সব স্বপ্ন যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল মুহূর্তে। মনের দিক থেকে আমি একটু একটু করে শুকিয়ে গেলাম। আমার সব সত্তা যেন আমি হারিয়ে ফেললাম।
এবার স্থির সিদ্ধান্তে এসে গেলাম যে, শুধুমাত্র চাকরি ছাড়া আর কিছুই করব না, ভাবব না। আমার ভেতর থেকে যেন হেরে যাবার একটা কান্না বেরিয়ে আসতে চাইল!
নিজের কাছেই আমি নিজে প্রশ্ন করি, কেন আমার এই ভাগ্যবিড়ম্বনা?
কেন আমার এই ব্যর্থতা? কার অভিশাপ নিয়ে আমার অভিযান?
হাতে দু-একখানা ছবি আছে বটে, তবে বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। অভিনয়ের ব্যাপারে আমার যে একটা স্বতন্ত্র উৎসাহ ছিল, আকাক্সক্ষা ছিল, আশা ছিল-সব কেমন যেন থেমে গেছে। আমি ব্যর্থ শিল্পী হিসাবে নিজেকে শুধু মাঝে মাঝে ধিক্কার দিই।
আমার বন্ধুরা আমাকে উৎসাহিত করে। তারা আমাকে সাহস দেয়। তারা আমাকে প্রেরণা জোগায়। অনুপ্রাণিত করে। বলে ফ্লপ করলে তো তোমার দোষ নয়, তুমি এত ভেঙে পড়বে কেন?
নিজের প্রতি বিশ্বাস যেমন আমি হারিয়ে ফেলেছি, তেমনই সিনেমা-জগতের অনেকেই আমার প্রতি যেন বিশ্বাস হারাতে চলেছেন, আমি তা বেশ বুঝতে পারছি। এই ১৯৫১ সালে ভারতীয় ছবির ক্ষেত্রে আবার নতুন এক আইন প্রবর্তিত হলো। আমার তো মনে হয়, এই আইনের প্রয়োজন ছিল ছবির ক্ষেত্রে তা হলো সেন্সার আইন। ১৯৫১ সালের ১৫ই জানুয়ারি বম্বেতে কেন্দ্রীয় ফিল্ম সেন্সর বোর্ড তৈরি হলো। এসব হলে হবে কী, আমি তখন নিজেকে নিয়ে জটিল ভাবনায় পড়েছি। একটার পর একটা ব্যর্থতা অথচ সংসারের দায়-দায়িত্ব ষোলো আনা। আমি তখন শুধু বিবাহিত নইÑএকটি সন্তানের বাবা। সুতরাং দুশ্চিন্তায় আমি যেন মাথা তুলতে পারছি না।
এই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বলতম তারাটি খসে গেল। প্রমথেশ
বড়–য়া ছিলেন আমার পরম শ্রদ্ধেয়। প্রতি মুহূর্তে যাকে মনে মনে স্মরণ করতাম, সেই প্রমথেশ বড়–য়া মারা গেলেন এই সালের ২৯শে নভেম্বর।
তারপর যখন আমি ‘সহযাত্রী’ ছবির নায়ক নির্বাচিত হলাম এবং কাজ শুরু করলাম, তখন আমার কাজ দেখে কি না জানি না বিভূতিবাবু আমাকে পোর্ট কমিশনার্সের চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। ঠিক তখনই চাকরিজীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে আনিনি বটে, তবে চাকরিটাকে যেন আমি ফাউ ভেবে নিলাম। একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ‘সহযাত্রী’ ছবিতে আমি কাজ করেছিলাম। ভাগ্যের বিড়ম্বনা কেউ কখনো খন্ডন করতে পারে না। আমিও আবার ভাগ্যকে অস্বীকার করতে পারলাম না।
এই ছবিতে আমার অরূপকুমার নাম ঘুচে গেল। ‘কামনা’য় ছিলাম উত্তম চ্যাটার্জি। তাও গুচে গেল। এবার আমি হলাম উত্তম কুমার। এই নামে ভূষিত করলেন বিমল ঘোষ।
১৯৫১ সালে মুক্তি পেল ‘সহযাত্রী’।
তখনকার দিনের বহু খ্যাতনামা শিল্পীর সঙ্গে নায়িকা হিসাবে প্রখ্যাত নায়িকা ভারতী দেবী থাকা সত্ত্বেও ‘সহযাত্রী’ও আশাতীত সাফল্য লাভ করল না। চলচ্চিত্র জগতের ভাষায় ছবিটি ফ্লপ হলো। এবার সত্যিই ব্যর্থতার আঘাতে আমি চূর্ণ-বিচূর্ণ। চোখে যেন রীতিমতো অন্ধকার দেখছি।
১৯৫১ সাল আমার জীবনটাকে যেন তছনছ করে দিল। আমি নিজেই নিঃশেষ হয়ে যাবার শেষ সোপানে যেন এসে দাঁড়ালাম। ইতিপূর্বে ‘ওরে যাত্রী’ নামে যে ছবিটিতে কাজ করেছিলাম সেটিও মুক্তি পেল এই বছরে।
শুধু তাই নয়, পশুপতিবাবুর ছবিটিও এই বছরেই মুক্তি পেয়েছিল।
বলা হয়নি, চলচ্চিত্র সাংবাদিক হিসাবে এখন পশুপতি চট্টোপাধ্যায়ের নাম অনেকেই জানেন আশা করি। এই পশুপতিবাবু একদিন ছিলেন চিত্রপরিচালক। তার ‘নষ্টনীড়’ ছবিতে আমি অভিনয় করেছিলাম।
সেই ছবির নায়িকা ছিলেন তদানীন্তন কালের স্বনামধন্য অভিনেত্রী সুনন্দা দেবী।
আমার জীবনের অভিশপ্ত ১৯৫১ সালের কয়েক মাসের ব্যবধানে পর পর তিনটি ছবি যেন আমার শিল্পচেতনার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির হলো আমার সামনে। তিনটি ছবিই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ব্যর্থ হলো।
আমার এতদিনকার সব স্বপ্ন যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল মুহূর্তে। মনের দিক থেকে আমি একটু একটু করে শুকিয়ে গেলাম। আমার সব সত্তা যেন আমি হারিয়ে ফেললাম।
এবার স্থির সিদ্ধান্তে এসে গেলাম যে, শুধুমাত্র চাকরি ছাড়া আর কিছুই করব না, ভাবব না। আমার ভেতর থেকে যেন হেরে যাবার একটা কান্না বেরিয়ে আসতে চাইল!
নিজের কাছেই আমি নিজে প্রশ্ন করি, কেন আমার এই ভাগ্যবিড়ম্বনা?
কেন আমার এই ব্যর্থতা? কার অভিশাপ নিয়ে আমার অভিযান?
হাতে দু-একখানা ছবি আছে বটে, তবে বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। অভিনয়ের ব্যাপারে আমার যে একটা স্বতন্ত্র উৎসাহ ছিল, আকাক্সক্ষা ছিল, আশা ছিল-সব কেমন যেন থেমে গেছে। আমি ব্যর্থ শিল্পী হিসাবে নিজেকে শুধু মাঝে মাঝে ধিক্কার দিই।
আমার বন্ধুরা আমাকে উৎসাহিত করে। তারা আমাকে সাহস দেয়। তারা আমাকে প্রেরণা জোগায়। অনুপ্রাণিত করে। বলে ফ্লপ করলে তো তোমার দোষ নয়, তুমি এত ভেঙে পড়বে কেন?
নিজের প্রতি বিশ্বাস যেমন আমি হারিয়ে ফেলেছি, তেমনই সিনেমা-জগতের অনেকেই আমার প্রতি যেন বিশ্বাস হারাতে চলেছেন, আমি তা বেশ বুঝতে পারছি। এই ১৯৫১ সালে ভারতীয় ছবির ক্ষেত্রে আবার নতুন এক আইন প্রবর্তিত হলো। আমার তো মনে হয়, এই আইনের প্রয়োজন ছিল ছবির ক্ষেত্রে তা হলো সেন্সার আইন। ১৯৫১ সালের ১৫ই জানুয়ারি বম্বেতে কেন্দ্রীয় ফিল্ম সেন্সর বোর্ড তৈরি হলো। এসব হলে হবে কী, আমি তখন নিজেকে নিয়ে জটিল ভাবনায় পড়েছি। একটার পর একটা ব্যর্থতা অথচ সংসারের দায়-দায়িত্ব ষোলো আনা। আমি তখন শুধু বিবাহিত নইÑএকটি সন্তানের বাবা। সুতরাং দুশ্চিন্তায় আমি যেন মাথা তুলতে পারছি না।
এই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বলতম তারাটি খসে গেল। প্রমথেশ
বড়–য়া ছিলেন আমার পরম শ্রদ্ধেয়। প্রতি মুহূর্তে যাকে মনে মনে স্মরণ করতাম, সেই প্রমথেশ বড়–য়া মারা গেলেন এই সালের ২৯শে নভেম্বর।