প্রথম পাতা

সরকার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাইলে জনগণ মানবে না

স্টাফ রিপোর্টার

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে সরকার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাইলে জনগণ মানবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ কায়দায় এবং ভঙ্গিতে মিথ্যাচার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এমন কিছু বলেছেন যার সঙ্গে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন, নির্বাচন ঠেকে থাকবে না। এ ব্যাপারে  তার অভ্যাস আছে, অভিজ্ঞতা আছে। ২০১৪ সালে যে নির্বাচন তারা করেছেন সেখানে শতকরা ৫ ভাগ মানুষও ভোট দেয়নি। ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। সেই সংসদ তারা জাতির ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন- যে সংসদে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- খালেদা জিয়া নির্বাচন না করলে এদেশে নির্বাচন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে যারা নির্বাচন করতে চায়, তারা আসলে প্রতিপক্ষকে বিরোধী দলকে এভয়েড করে (এড়িয়ে যাওয়া) একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়। নির্বাচন একতরফা করতে চায়। সেটা এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য আবারো ওই একতরফা-একদলীয় নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে সরকার। সেভাবে একটা নীলনকশা করেছে। সেই নীলনকশা অনুযায়ী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে একটা সম্পূর্ণ ভুয়া নথি তৈরি করে, আদালতকে ব্যবহার করে, আদালতের ঘাড়ে বন্দুক চাপিয়ে দণ্ড দিয়েছেন। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এভাবে ছলচাতুরি করে, দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আর যাই করা যায়, দেশের মানুষের ভালোবাসা নেয়া যাবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ‘৭ ধারা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপির ৭ ধারায় ছিল পিও প্রেসিডেন্ট অর্ডার-৮, যেটা ১৯৭২ সালে করা হয়েছিল। সেই ধারা এখন নেই। এটা বাতিল হয়ে গেছে। সেই দণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি দলের কোনো পদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না, দলের প্রধান হতে পারবে না। আজকে একটা কথা মানতে হবে যে, এই দণ্ডটা কারা দিয়েছে? একটি আদালত এই দণ্ড দিয়েছেন। সেই আদালত কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত? এই আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সেই আদালতে যারা আছে তারা সরকার নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, ৭ ধারায় পরিবর্তনটা কী হয়েছে? সমাজের স্বীকৃত কোনো দণ্ডিত ব্যক্তি যদি হন- সেটা এখনো আছে। সুতরাং মেজর কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি একটা বিষয় বুঝতে পারি না, বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে কে প্রধান হলো, না হলো- উনাদের (সরকারের) এতো মাথা ব্যথা কেনো? উনাদের এতো আশঙ্কা কেনো? খালেদা জিয়াকে নিয়ে, উনি নির্বাচন করতে পারবেন কি পারবেন না এটা নিয়ে তাদের (সরকার) এতো আশঙ্কা কেনো, ভয় কেনো? খালেদা জিয়া নির্বাচন না করতে পারলে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সুবিধা হয়, আমরা ভালো করেই বুঝি। মির্জা আলমগীর বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিধি গেজেট করার বিষয়ে তিনি আপত্তি দিয়েছিলেন। সরকার সেই ষোড়শ সংশোধনী রায়কে কেন্দ্র করে তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছেন। তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন এবং বিধি গেজেটকে তারা বহাল রেখেছেন। এতে বিচারবিভাগের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ পোক্ত হয়েছে। নিম্ন আদালতে একটি সার্কুলার গেছে উল্লেখ করে মির্জা আলমগীর বলেন, এই সার্কুলারের মাধ্যমে বিচারকদের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে, তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, বিএনপির বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জামিনের সময়ে চিন্তা করতে হবে এবং কঠোর হতে হবে। এটা পরিষ্কার বিচারবিভাগকে প্রভাবিত করা ও হস্তক্ষেপ করা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে বিচারবিভাগের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অটোমেটিক্যালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। এটা তাদের (সরকার) বিষয় না। বিষয়টা আমাদের। এটা আমাদের কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। খালেদা জিয়ার রায়ের কপি পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, আমি আইনগত দিক বলতে পারবো না। এটা আইনজীবীরা জানেন। তবে অবশ্যই আপিল করা হবে। আশা করি এই সপ্তাহে আপিল ফাইল করা হবে। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status