শেষের পাতা
প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধানদের নিয়ে আনা বিল পাস
সংসদ রিপোর্টার
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন
অবসরে যাওয়া প্রতিরক্ষা বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমান) প্রধান সাংবিধানিক পদে নিয়োগ পেতে পারেন- এমন বিধান রেখে গতকাল সংসদে পাস হয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের প্রধানদের (নিয়োগ, বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধাদি) আইন-২০১৮। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করেন। বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনীর প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিরা। কণ্ঠভোটে তাদের প্রস্তাব নাকচ হয়। এর আগে বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হলে তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি বিলটি পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও পর্যালোচনা করতে ৩ সদস্যের সাব-কমিটি গঠন করে। এতে আহ্বায়ক করা হয় মুহাম্মদ ফারুক খানকে। অপর দুই সদস্য ছিলেন- মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি ও বেগম হোসনে আরা বেগম। পরে কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বিলটি পাসের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন দ্বারা বাধা আরোপিত না হইয়া থাকিলে অবসরপ্রাপ্ত কোন বাহিনী প্রধান সাংবিধানিক কোনো পদে নিয়োগ লাভের জন্য অযোগ্য বলে গণ্য হবেন না। বিলের, উপ-ধারা ৯৩) এর বিধান সাপেক্ষে বাহিনী প্রধানের নিয়োগের মেয়াদ হইবে একসঙ্গে বা বর্ধিতকরণসহ নিয়োগ প্রদানের তারিখ হইতে অনূর্ধ্ব চার বছর। এছাড়া বিলে প্রতিমাসে বাহিনী প্রধানের বেতন ৮৬ হাজার টাকা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাহিনী প্রধানদের পুনঃনিয়োগ প্রসঙ্গে বিলে বলা হয়েছে- বাহিনী প্রধান অবসরপ্রাপ্ত হওয়া বা স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো সামরিক বা বেসামরিক পদে পুনঃনিয়োগ লাভে অযোগ্য হবেন। এ বিষয়ে শর্ত উল্লেখ করে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি জনস্বার্থে আবশ্যক মনে করিলে অবসরপ্রাপ্ত কোনো বাহিনী প্রধানকে চুক্তি ভিত্তিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো বেসামরিক পদে নিয়োগ দান করতে পারবেন। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৬২ অনুচ্ছেদ এর বিধানমতে, সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের প্রধানদের নিয়োগদান ও তাদের বেতন ও ভাতাদি নির্ধারণ করার বিধান থাকলেও দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা বাহিনী সমূহের প্রধানদের নিয়োগ ও বেতন-ভাতাদি সম্পর্কিত কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের প্রধানদের নিয়োগ ও বেতন-ভাতাদিও বিষয়টি সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে স্বতন্ত্রভাবে ব্যবস্থিত না হয়ে বর্তমানে যৌথবাহিনী নির্দেশনাবলী নামীয় ইন্সট্রুমেন্ট দ্বারা অন্যান্য সকল সামরিক কর্মচারীর সঙ্গে একীভূতভাবেই ব্যবস্থিত হচ্ছে। এ ধরনের যৌথবাহিনী নির্দেশনাবলীর পাঠোদ্ধার অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ কর্তৃক আইন প্রণয়ন করে বাহিনী প্রধানদের নিয়োগ এবং বেতন ও ভাতাদি সম্পর্কিত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বাহিনী প্রধানগণ চাকরিকালীন যে সকল আর্থিক সুবিধাদি প্রাপ্য হন, কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়া, উহাদের হুবহু অন্তর্ভুক্ত করে আইনের একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এতে বলা হয়েছে, খসড়াটির বিষয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ এবং কম্পট্রোলার জেনারেল অব ডিফেন্স ফাইন্যান্স এর মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আইন, বিধি, বিধান, নির্দেশনাবলি ও আদেশসমূহ সংশোধন/রহিতকরণ নতুনভাবে প্রণয়নপূর্বক যুগোপযোগী ও হালনাগাদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের জন্য গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির একাধিক সভায় খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। প্রস্তাবিত খসড়াটি আইনে রূপান্তরিত হলে প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের প্রধান পদে (নিয়োগদান ও মেয়াদ) আদেশ, ২০১৬ সম্পূর্ণ রহিত হবে এবং যৌথবাহিনী নির্দেশনাবলী ১/২০১৬ আংশিক অকার্যকর হবে।