দেশ বিদেশ

পরীক্ষার দুই মাস পূর্বে প্রচারণা চালানো হতো

স্টাফ রিপোর্টার

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

গরিব ঘরের সন্তান। লেখাপড়া করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবারের পক্ষে লেখাপড়ার খরচ চালানো অসম্ভব। তাই চার বছর আগে প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যান। প্রথমবার মাত্র দু’টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন। সেইবার তেমন লাভ করতে পারেননি। তার পরের বছর থেকে লাভের মুখ দেখা শুরু করেন। প্রশ্নফাঁসের সকল কৌশলও আয়ত্ত করে  ফেলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজে একটি গ্রুপও খোলেন। পরীক্ষার সকল সাজেশন দেয়া হবে বলে প্রচারণা চালিয়ে সেই গ্রুপে সদস্য সংগ্রহ করতেন। বিস্তারিত জানার জন্য নিজের ইনবক্সে যোগাযোগ করার বিষয়টি উল্লেখ করতেন। ইনবক্সেই সে প্রশ্নফাঁসের বিস্তারিত তথ্য দিতো। মূল গ্রুপে এড করার আগে দর কষাকষি করে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে প্রশ্নপত্রের জন্য টাকা লেনদেন করে তাদেরকে এনলিস্টেট করা হতো। নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রবেশপত্রের ফটোকপি ও টাকা পাঠানোর রশিদের কপি চাইতেন। সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল গ্রুপে এড করতেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কাছে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এমনটাই তথ্য দিয়েছেন প্রশ্নফাঁস চক্রের এক এডমিন হাসানুর রহমান ওরফে রকি (২৯)। এছাড়া একই চক্রে জড়িত থাকায় উত্তর খানের ক্যামব্রিজ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক তানভির হোসেন, মো. সজিব মিয়া ও সৃজনশীল কোচিং সেন্টারের শিক্ষক মো. এনামুল মিয়া এবং মো. ইব্রাহিমকে গাজীপুর ও উত্তরখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করেছে র‌্যাব-৩ সদস্যরা। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার দুই মাস পূর্বে ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে সদস্য সংগ্রহ করতো। পরে তাদেরকে নিয়ে একটি গ্রুপ খোলা হতো। শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার জন্য একটি গ্রুপ। মজা, আড্ডা, ব্লাড ডোনেশন-১,২,৩ নামে আরো গ্রুপ থাকতো। ধরা পড়ার আশঙ্কায় গ্রুপের বিভিন্ন নাম পরিবর্তন করা হলেও এডমিন একই থাকতো। মুফতি মাহমুদ বলেন, তারা মূলত তিনটি পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। প্রথমত, সদস্য সংগ্রহ করে গ্রুপ তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, গ্রুপ তৈরি করে প্রশ্নপত্রের জন্য টাকা নিশ্চিত করা হয়, তৃতীয়ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সমাধান করা হয়। এই তিনটি পদ্ধতিতেই প্রশ্নফাঁস চক্রের এই সদস্যরা কাজ করে। তবে প্রশ্নপত্র পাওয়ার জন্য রকি টপটেন নামের একটি গ্রুপের সাহায্য নিতো। টপটেনই পরীক্ষার দিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দিতো। তারপর অন্যান্য চক্রগুলো প্রশ্নপত্রের সমাধান করে পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতো। মুফতি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রকি প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত থাকার বিষয় এবং সে কিভাবে এই কাজ করে তার বর্ণনা দিয়েছে। আমাদের কাছে যদি তাকে একটু বেশি সময় রাখা যেত তাহলে আরো অনেক তথ্য পাওয়া যেত। তবে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্য তথ্য দিয়েই আমরা টপটেনসহ আরো বড় বড় এডমিনদের আটকের চেষ্টা চালাবো। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন স্কুলের ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষক জড়িত আছেন। একটি স্কুল ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের আমরা আটক করেছি। তারা মূলত প্রশ্নের সমাধানের কাজ করে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status