খেলা

ক্রিকেটের গলদটা পরিকল্পনাতেই

স্পোর্টস রিপোর্টার

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

নতুন বছর শুরু থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট ঘিরে ছিল দারুণ কিছুর স্বপ্ন। ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা তিন জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত। তাই সেই স্বপ্ন ডানা মেলে আরো দূরে উড়ে যেতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই এলোমলো সবকিছু। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শেষ দুই ম্যাচে হেরে প্রথমবার কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের বাসনা অধরাই রয়ে গেল। আর টাইগারদের ছুড়ে ফেলে নিজ দেশ লঙ্কার দায়িত্ব নেয়া কোচ হাথুরুসিংহেকে দেখিয়ে দেয়াও হলো না। টেস্টে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুমিনুলের ব্যাটিং ক্যারিশমাতে কোনো রকম ড্র করে চট্টগ্রামে। কিন্তু ঢাকাতে ফিরে আড়াইদিনেই হারের লজ্জায় টেস্ট সিরিজও হাতছাড়া। এরপর শেষ সুযোগ ছিল টি- টোয়েন্টিতে ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু শেষটাতে মিললো আরো বড় লজ্জা। তাতেই নতুন বছর শুরুতেই রচিত হলো ব্যর্থতার পাণ্ডুলিপি। কিন্তু এমন আকাশ থেকে মাটিতে পতন কেন? জাতীয় দলের সাবেক দুই কোচ সারওয়ার ইমরান ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চেষ্টা করেছেন সেই কারণটা জানাতে।
এমন হারের কারণ নিয়ে জানতে চাইলে দৈনিক মানবজমিনকে কোচ সারোয়ার ইমরান বলেন, ‘আপনারা যদি একটি বড় দলের দিকে তাকান দেখেন কখনো এত বড় পরিবর্তন হয় না। যেমন ৮/৯ জন ক্রিকেটার কিন্তু নিশ্চিত থাকে। একাদশেও যদি পরিবর্তন হয় তাহলে উইকেট বুঝে একটা বা সর্বোচ্চ দুইটা। কিন্তু আমাদের এ সিরিজে দেখেন একজন স্পিনার দরকার দলে নিয়েছিল ৬ জন। টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলো তাও ৬ জন! এটাতো কোনো পরিকল্পনা হতে পারে না। হ্যাঁ, ইনজুরি ছিল ঠিক আছে কিন্তু আরো পরীক্ষিত ক্রিকেটারতো ছিল। আমি বলবো ঘন ঘন পরিবর্তনই ও পরিকল্পনাগুলো কাজে না আসাতেই এমন ভাবে হেরেছি আমরা।’
এটিতো সত্যি ইনজুরির কারণে টেস্টে সাকিব আল হাসান ছিলেন না, স্পিন বিভাগে কোনো ধারই দেখা যায়নি। পেস বিভাগে একা মোস্তাফিজুর রহমানের সফলতাও তেমন নয়। ইনজুরির কারণে তামিম খেলতে পারেননি। টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর পেস বিভাগে তেমন কোন ধার নেই। দুই ফরমেটে বিকল্প অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে অসহায় দেখা গেছে। ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান ছিলেন ফর্মের বাইরে। ছয়জন অভিষিক্ত ক্রিকেটারের একজনও নিজেকে সঠিকভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। তাহলে কি বলতেই হচ্ছে যে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, ইমরুলদের বিকল্প ক্রিকেটার এখনও তৈরি হয়নি?
এ বিষয়ে সারওয়ার ইমরান বলেন, ‘দেখেন এটি অনেক বড় চিন্তার বিষয়। বিকল্প যে একেবারেই হয়নি তা নয়। জাকির খুব ভাল ক্রিকেটার। আফিফের সম্ভাবনা আছে, নাজমুল অপুও ভালো করছে। কিন্তু তারা এখনো ওদের মাপে হয়নি। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪ অভিষেক! সেটাই আমার প্রশ্ন। নাসির ছিল, বিজয় ছিল, মুমিনুলও যে খারাপ খেলে তা নয়। এরাতো টি-টোয়েন্টিতেও প্রমাণ করেছে নিজেদের। তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে কেন সুযোগ দেয়া হলো না! এত বড় পরীক্ষা-নীরিক্ষা আসলে ঠিক নয়। বলতে পারে ১৯৩ রান করেছি। কিন্তু সেটা কাদের ব্যাট থেকে এসেছে? অভিজ্ঞরাই করেছে। আরেকটা বিষয় বলবো- যখন সাকিব-তামিম-মাশরাফিরা একেবারে রির্টার্ড করবে তখন কিন্তু আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আমি বলবো এখনই পাইপ লাইন শক্ত না করলে আমাদের জন্য বড় অশনিসংকেত অপেক্ষা করছে।’
বিদেশি কোচ ছিল না। হাথুরুসিংহে বাংলাদেশে সাড়ে তিন বছর থাকায় তিনি টাইগারদের শক্তি-দুর্বলতা সবই জানতেই। তাই তার পরিকল্পনাও লঙ্কান বোলার, ব্যাটসম্যানরা দারুণ কাজে লাগিয়েছেন মাঠে। কিন্তু আমাদের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের কোচের দায়িত্ব পালন দেখে মনে হয়েছে সব পরিকল্পনাই এলোমেলো। এ প্রসঙ্গে জাতীয় দলের সাবেক কোচ বলেন, ‘আমার কাছে কেন জানি মনে হয়েছে সে (খালেদ মাহমুদ) শত ভাগ স্বাধীন নয়। সে সব পরিকল্পনা স্বাধীন ভাবে করতে পারেনি। একজন কোচকে সবরকম ছাড় না দিলে দলের জন্য তার অবদান রাখা খুবই কঠিন।’
আমাদের বোলার কোথায়!
-কোচ সালাউদ্দিন

ওয়ানডেতে তিন জয় ও টেস্ট ড্র’র সান্ত্বনা ছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে এখন আমাদের অবস্থান আফগানিস্তান ও হংকংয়ের মতো দলের চেয়ে খারাপ। তাই র‌্যাঙ্কিংটাও আমাদের এখন পর্যন্ত এ ফরমেটে যাচ্ছে তাই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর টি-টোয়েন্টি ফরমেটে টাইগারদের কংকালটাই ভেসে উঠেছে। মাশরাফির চলে যাওয়া, সাকিবের না থাকা, মুমিনুল হক, নাসিরকে সুযোগ না দেয়া, তামিমের ইনজুুরি, সাব্বিরের ফর্মে না থাকাতেই কি দলের এমন অবস্থা? জানতে চাইলে কোচ সালাউদ্দিন বলেন, ‘আসলে বিষয়টা এমন না। আমার কাছে গোটা সিরিজে যেটা মনে হয়েছে আমাদের বোলিং বিভাগ খুবই দুর্বল। আর এ দুর্বলতার চরম নমুনা ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। দেখেন ম্যাচে প্রতিপক্ষকে আতঙ্ক তৈরি করার মত কোন বোলিংই হয়নি। এক কথায় আমি বলবো আমাদের আসলে সেই মানের বোলার এখনো নেই। যা দিয়ে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত জয় না হলে ধারাবাহিক ভাল খেলা যায়। সত্যি কথা এখন বোলিং বিভাগ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’
অন্যদিকে এত অভিষেক না করিয়ে মুমিনুল, বিজয়, নাসিরদের আরো একটি সুযোগ দেয়া উচিত ছিল কিনা। বিশেষ করে মুমিনুলকে? এ নিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘এটি আসলে যারা টিম ম্যানেজমেন্টে আছে তাদের চিন্তা হওয়া উচিত ছিল। আমিতো আর পরিকল্পনা করি না। আর এখন এমন হারের পর যদি তাদের নিয়ে ভাবা হয় সেটাও মনে হয় সঠিক হবে না। ক্রিকেটে পরিকল্পনা বড় বিষয়। কিন্তু তা যারা মাঠে বাস্তবায়ন করবে সেটি তারা করতে পারেনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status