বিনোদন
চলে গেলেন সাবা তানি
স্টাফ রিপোর্টার
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন
চলে গেলেন বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের এক সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সাবা তানি (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। নিম্ন রক্তচাপজনিত কারণে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৪৯। জানা গেছে, সাবা তানি গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকে কারো ফোন রিসিভ করছিলেন না। গতকাল সকালেও যখন ফোন রিসিভ করছিলেন না তখন চিন্তায় পড়ে যান সবাই। এরপর তার আত্মীয়রা বাসায় গিয়ে কেয়ারটেকারের সহায়তায় দরজা ভেঙে বাথরুম থেকে সাবা তানির মৃতদেহ উদ্ধার করেন। এ সংগীতশিল্পীর একমাত্র ছেলে আনিদ উচ্চশিক্ষায় লন্ডনে আছেন। তিনি দেশে ফিরলেই সাবা তানির দাফনের সব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। আশি ও নব্বই দশকে পপ সংগীতশিল্পী হিসেবে সাবা তানির দারুণ জনপ্রিয়তা ছিলো। তবে অনেক বছর ধরেই সংগীতাঙ্গনে তার তেমন বিচরণ ছিল না। মাঝে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এলেও গানে আর সেভাবে তাকে দেখা যায়নি। সবশেষ ২০১৬ সালে বাংলাভিশনের একটি ঈদ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। চার বছর আগে দেশ টিভির ‘কল-এর গান’ অনুষ্ঠানেও দীর্ঘদিন পর সংগীত পরিবেশন করেছিলেন সাবা তানি। তারও আগে ‘ক্লোজআপ ওয়ান : তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ ২০১২’ প্রতিযোগিতায় সিলেট অঞ্চলের বাছাই পর্বের বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। সাবা তানির বাবা মরহুম শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মা মিসেস হাজেরা চৌধুরী। তার দুই ভাই দুই বোন। এক ভাই এক বোন আগেই মারা গেছেন। এক ভাই এক বোন দেশের বাইরে আছেন। চিত্রনায়ক নাঈমের মা মালা মুরাদ পন্নী ও সাবা তানির মা মিসেস হাজেরা চৌধুরী আপন দুই বোন। খালাতো বোনের মৃত্যুর সময় নাঈম দেশের বাইরে ছিলেন। গতকাল রাতেই তার দেশে ফেরার কথা। নাঈমের স্ত্রী শাবনাজের ছোট বোন অভিনেত্রী তাহমিনা সুলতানা মৌ জানান, আনিদ এলেই সাবা তানি আপুর নামাজে জানাজা এবং দাফনের বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বলা যায় প্রায় একইসঙ্গে পথচলা শুরু করেছিলেন ব্যান্ড তারকা লাবু রহমান। সাবা তানির মৃত্যুতে তিনি বলেন, আমার খুউব ভালো একজন বন্ধু ছিলো সাবা। এভাবে তার চলে যাওয়াটা সত্যিই অনেক অনেক কষ্টের। আল্লাহ্্ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন। কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, সাবা তানির হঠাৎ এই চলে যাওয়াটা বুকে প্রচণ্ড ক্ষত সৃষ্টি করে দিয়ে গেল। মৃত্যু কত সত্য, কত কঠিন তাই যেন সাবা তানি মনে করিয়ে দিয়ে গেল। তার আত্মার শান্তি কামনা করি। সাবা তানি ও রবি চৌধুরীর গাওয়া ‘ভালোবাসা বহুরূপী তাকে চেনাতো যায় না’ গানটি একসময় শ্রোতা-দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। লিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা এবং প্রণব ঘোষের সুর সংগীতের এই গানটিই ছিলো সাবা তানির সর্বশেষ আলোচিত গান। রবি চৌধুরী বলেন, সাবা তানি ছিলো অনেক ভালো মনের মানুষ। তার ব্যবহার এতোই সুন্দর ছিলো যে সবাই অতি সহজেই তার খুব আপন হয়ে যেত। শাম্মী আখতারের পর আমরা আরেকজন ভালো মানুষকে
হারালাম। একসঙ্গে পথচলা হয়েছিলো ফুয়াদ নাসের বাবু ও সাবা তানির। গেল শনিবারও তার সঙ্গে কথা হয়েছিল বলে জানান বাবু। তিনি বলেন, সাবা তানি একাধারে আমার সহকর্মী, বন্ধু এবং আমার শুভাকাঙ্ক্ষী একজন। সে এভাবে হঠাৎ করে চলে যাবে এটা আসলে মেনে নেয়া খুবই কঠিন। আল্লাহ্্ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন, এই দোয়াই করি। সাবা তানি ও সুমনা হক দুই বন্ধু ছিলেন। সুমনা হক বলেন, খবরটা শোনার পর থেকেই ভীষণ একা একা লাগছে। বিকালেই গিয়েছিলাম উত্তরার বাসায়। কিন্তু সেখানে দেখতে পাইনি। সাবা তানি আর আমি একসঙ্গে অনেকটা সময় পথ চলেছি। সাবা যখন স্টেজ প্রোগ্রাম নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলো, আমি তখন জিঙ্গেলে ব্যস্ত ছিলাম। মাঝখানে অনেকদিন দেখা হয়নি আমাদের। কিন্তু দেশ টিভির একটি অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে গান গেয়েছি। আবার ক’দিন আগেই চ্যানেল আইয়ের মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে দেখা হলো। এভাবে তার চলে যাওয়াটা মেনে নেয়ার মতো নয়। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাবা তানির মরদেহ বারডেমের হিমাগারে রাখার কথা। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ছেলে দেশে ফিরলে টাঙ্গাইলের গোড়াইতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হতে পারে।