বিনোদন
আলাপন
‘কমে গেছে নাটকের বাজেট ও গল্পের মান’
এন আই বুলবুল
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
অভিনেতা সমু চৌধুরী মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়ে টিভি পর্দায় আসেন। ১৯৯০ সালের ২২শে মার্চ এই অভিনেতার প্রথম নাটক ‘সমৃদ্ধ অসীম’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হয়। এটি প্রযোজনা করেন আতিকুল হক চৌধুরী। প্রথম নাটকেই তিনি সবার নজর কাড়েন। এই অভিনেতার উল্ল্যেখযোগ্য কিছু নাটক হলো ‘সবুজের হলুদ ব্যাধি’, ‘জীনের বাদশা’, ‘পৃষ্ঠ’, ‘মা তুরাগ নদী’, ‘দূরের আকাশ’ প্রভৃতি। মাঝে প্রায় তিন বছরের জন্য সমু চৌধুরী অভিনয়ে বিরতি টানেন। তবে কোনো ক্ষোভ থেকে নয়, একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য ছিলো এ বিরতি। গেলো বছরের জুলাই মাসে তিনি অভিনয়ে ফেরেন। বর্তমানে নিয়মিত অভিনয় করছেন বলে জানান সমু চৌধুরী। নতুন করে ফেরা প্রসঙ্গে এ অভিনেতা বলেন, দর্শক আমাকে কতটা ভালোবাসেন অভিনয়ে না ফিরলে জানা হতো না। সবার ভালোবাসায় আমি আবেগে আপ্লুত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি অভিনয় করে যেতে চাই। ক্যারিয়ারের প্রায় ২৮ বছর পার করছেন এই অভিনেতা। দীর্ঘ এই সময়ে অনেকের উথান-পতন দেখেছেন। একই সঙ্গে টিভি নাটকের নানা পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে আছেন এই অভিনেতা। এই পরিবর্তনকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন আসবেই। এটিকে মেনে নেওয়া উচিত। কিন্তু এই পরিবর্তনে অনেক কিছুর সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। একটা সময় নাটক দেখার প্রধান মাধ্যম ছিলো বাংলাদেশ টেলিভিশন। দর্শক নাটক দেখে পরিপূর্ণ বিনোদন পেত। এখন টিভি চ্যানেলের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু কমে গেছে নাটকের বাজেট ও গল্পের মান। অল্প সময়ে নাটক নির্মাণ হওয়ার কারণে নির্মাতারা নির্মাণে যতœ নিতে পারেন না। অভিনয় শিল্পীরা একবারের বেশি দু’বার টেক দিতে চান না। আমাদের সেই সময়ে মনের মতো না হওয়া পর্যন্ত টেক দিতাম। সত্যি বলতে এখন সবাই দ্রুত একটি কাজ শেষ করতে পারলেই যেন বাঁচেন। এদিকে এই সময়ের নাটকে ভাষা বিকৃতির অভিযোগ শোনা যায়। আঞ্চলিকতার নামে নাটকে বাংলা ভাষার অপব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। এই সম্পর্কে গুণী এই অভিনেতার অভিমত কি? তিনি বলেন, এই সময়ে নির্মাতা, স্ক্রীপ্ট রাইটার ও অভিনয় শিল্পীদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। অনেক শিল্পী এখন শুধু পেশার খাতিরে কাজ করেন। একটি নাটকে অভিনয়ের আগে সেটির মান বিচার করেন না। আমি মনে করি সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়েই একটি ভালো নাটক নির্মাণ হয়। তবে আমি বিশ্বাস করি আমাদের নাটকে আবার সেই সময়টা ফিরে আসবে। এখন অনেক নির্মাতা টিভির চেয়ে ইউটিউবের জন্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন। এটি কি আমাদের টিভি নাটকে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক বলেই আমি মনে করি। টিভির পাশাপাশি ইউটিউবের জন্য নির্মাণের কারণে কাজের সংখ্যা বাড়ছে। শিল্পীদের ব্যস্ততা বাড়ছে। টেলিভিশনে এর জন্য কেনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ টিভির জন্যও অনেক নাটক নির্মাণ হচ্ছে প্রতি বছর। টিভির পাশাপাশি ইউটিউব দর্শকের বিনোদনের নতুন একটি মাত্রা যোগ করেছে। সমু চৌধুরী বর্তমান সময়ে ছোট পর্দায় তার ব্যস্ততা নিয়েও কথা বলেন। গেল ১৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি ‘রুপার চাবি’ শিরোনামের একটি সিরিয়ালের কাজ শুরু করেছেন। এটি নির্মাণ করছেন কে এম নাঈম। এর বাইরে খুব শিগগির আরো দুটি সিরিয়ালের কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি। টিভি নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও সমু চৌধুরী প্রশংশিত। এ পর্যন্ত তিনি ১২টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘আদরের সন্তান’। সর্বশেষ তিনি প্রয়াত নায়ক মান্নার সঙ্গে ‘হৃদয় থেকে পাওয়া’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এছাড়া ‘শত জনমের প্রেম’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘দেশ দরদী’, ‘মরণ নিয়ে খেলা’ ছবিগুলোর জন্য তিনি দারুণ সাড়া পেয়েছেন। চলতি বছরে তাকে আবারো নতুন চলচ্চিত্রে দেখা যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।