প্রথম পাতা

প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

চলতি এসএসসি পরীক্ষার একটি বিষয়ের সম্পূর্ণ এবং  কয়েকটির আংশিক প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছে এ সংক্রান্ত কমিটি। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান মো. আলমগীর গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একথা জানান। এসএসসিতে প্রায় প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্ন ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আসার পর সমালোচনার মুখে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আলমগীরকে প্রধান করে এই কমিটি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রশ্ন ফাঁসের কোনো প্রমাণ পেয়েছেন কি-এই প্রশ্নে সচিব বলেন, আছে, কিছু কিছু আংশিক আছে। কিছু কিছু পুরোপুরি আছে। যেসব বিষয়ের আংশিক ফাঁস হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে পুরো পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করবে না কমিটি। তবে যদি দেখা যায় যে, কোনো প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে যদি অবজেকটিভ টাইপের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে বাকিটার পরীক্ষা নতুন করে নেব না, শুধু অবজেকটিভের জন্য পরীক্ষা হবে। যদি পরীক্ষা চলার এক-দুই ঘণ্টা আগে বা তিন ঘণ্টা আগে বা আগের দিন যদি ফাঁস হয়ে থাকে। তবে পরীক্ষা শুরুর ঠিক আগে প্রশ্নফাঁস হলে সেগুলো বাতিলের পক্ষপাতী নন তিনি। আর যদি দেখা যায় পরীক্ষা চলাকালীন বা আধা ঘণ্টা আগে যদি দেখা যায় ৫০০ ছেলেমেয়ে এরসঙ্গে জড়িত, এজন্য তো ২০ লাখ ছেলেমেয়ের পরীক্ষা বাতিল করা ঠিক হবে না।
আলমগীর বলেন, বাতিল করবে মন্ত্রণালয়, আমরা সুপারিশ করার মালিক। চলতি এসএসসি ও সমমানের বেশিরভাগ পরীক্ষার প্রশ্নই পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হচ্ছিল। সমপ্রতি ভয়াবহ আকারে প্রশ্ন ফাঁসের পর সরকার বলছে, পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিক্ষকরা প্রশ্নফাঁস করে দিচ্ছেন। কোনো বিষয়ের প্রশ্ন পুরোটা ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেছে তা না জানালেও সচিব বলেন, একটা পেয়েছি, এখন বলবো না, ২৬শে ফেব্রুয়ারি জানতে পারবেন। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান জানান, আগামী ২৫শে ফেব্রুয়ারি আরেকটি সভা করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবেন তারা, আর প্রতিবেদন জমা দেবেন ২৬শে ফেব্রুয়ারি।
গত ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ২৫শে ফেব্রুয়ারি। এসএসসির যেসব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে সেগুলো বিশ্লেষণের কথা জানিয়ে আলমগীর বলেন, প্রশ্ন কখন আউট হয়েছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে এর সঙ্গে মেলাতে হবে, সেগুলো পরীক্ষা করেছি। ২৫শে ফেব্রুয়ারি বসে পরীক্ষা করবো প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কতজন জড়িত ছিল। কতক্ষণ আগে ফাঁস হয়েছে, কত নম্বরের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, কতটুকু মিলেছে। সচিব বলেন, এমসিকিউ ফাঁস হয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে, সেটা মিলিয়ে দেখবো। হয়তো হবহু মিলেছে বা আংশিক মিলেছে বা মিলেনি। কিছু কিছু মিল পেয়েছি। প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিলেও ওই পুরস্কার দেয়ার মতো এখনো কাউকে পাওয়া যায়নি বলেও জানান সচিব আলমগীর। গত ১১ই ফেব্রুয়ারি এই কমিটির প্রথম সভা শেষে আলমগীর জানিয়েছিলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে ৩০০ মোবাইল নম্বর চিহ্নিত করে সেগুলো ব্লক করে দিয়েছে সরকার, ওইসব মোবাইল নম্বরের মালিকদের পুলিশ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। গতকাল সভা শেষে সচিব বলেন, ৩০০ মোবাইল নম্বরের বাইরে প্রতিদিনই নতুন মোবাইল নম্বর পুলিশ পাচ্ছে। সারা দেশে ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো গ্রেপ্তার হয়েছে। যেসব মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে তার মধ্যে কিছু ভিআইপি থাকার কথা জানালেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মনিটরিং এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় ১১ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও বিটিআরসি প্রতিনিধি, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধিদের ওই কমিটিতে রাখা হয়।
এদিকে গতকাল পরীক্ষা কেন্দ্রে দুই সেট প্রশ্ন পাঠানোর পর প্রশ্নফাঁস হয়নি বলে দাবি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তাদের দাবি, ট্রেজারি থেকে এক সেটের পরিবর্তে দুই সেট প্রশ্ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ে কোন সেটে পরীক্ষা হবে তা জানানো হয়। গতকাল পরীক্ষায় এ কৌশল নেয়ার পর পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়নি বলে দাবি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডগুলো।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, যুগ যুগ যাবৎ পরীক্ষা শুরুর বেশ কয়েকদিন আগে থানার ট্রেজারিতে দুই সেট ও পরীক্ষা কেন্দ্রে একসেট প্রশ্ন পাঠানো হতো। কিন্তু অব্যাহত প্রশ্নফাঁস ঠেকানোর নতুন কৌশল হিসেবে গতকাল থেকে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে দুই সেট প্রশ্নই পাঠানো হয়। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ট্রেজারি থেকে দুই সেট প্রশ্ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এরপর পরীক্ষার শুরুর আধা ঘণ্টা আগে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের এসএমএস ও ই-মেইলে জানিয়ে দেয়া হয়। এসএমএস ও ই- মেইল করে নির্ধারিত সেট খুলে পরীক্ষা নেয়া হয়। একাধিক শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ প্রক্রিয়ার বিষয়টি জানান। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফ উল্যাহ বলেন, আগে থানা অথবা ব্যাংকের ট্রেজারিতে পরীক্ষা শুরুর কয়েকদিন আগে দুই সেট প্রশ্ন পাঠানো হতো। পরীক্ষার দিন সকাল সোয়া সাতটার দিকে ডিসি/এডিসি ও ইউএনওদের বোর্ড কর্তৃক পাঠানো এসএমএসের মাধ্যমে সেট জানিয়ে দেয়া হতো। সেই অনুযায়ী ট্রেজারি থেকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কেন্দ্র সচিবদের একসেট প্রশ্ন বুঝিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু প্রশ্নফাঁস ঠেকানোর কৌশল হিসেবে গতকাল থেকে দুইসেট প্রশ্নই কেন্দ্রে পাঠানো হবে।  সকাল নয়টার পর ডিসি/এডিসি/ ইউএনওদের এসএমএস’র মাধ্যমে সেট জানিয়ে দেয়া হবে। তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন। সেই আলোকেই রোববার সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা বোর্ডের পরীক্ষা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status