শেষের পাতা

শেষ বেলায়ও লজ্জা

ইশতিয়াক পারভেজ, সিলেট থেকে

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

১৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ। টিকিটযুদ্ধে জয়ী দর্শকরা মাঠে এসেছিলেন নানা সাজে। যারা টিকিট পাননি তাদের অনেকেই গেটের বাইরে ছিলেন অপেক্ষায়। বাকিরা চোখ রেখেছেন টিভির পর্দায়। স্বপ্ন  একটাই ‘জয়’। তাই ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে মুখর চা-বাগান ঘেরা স্টেডিয়ামে বইছিল অনন্দের বন্যা। টাইগারদের বোলিং ব্যর্থতায় শ্রীলঙ্কা ২১০ রান তুললেও গ্রিন গ্যালারিতে ছিল আলোর ঝলকানি। একের পর এক ফুটেছে আতশবাজি। এমন উত্তেজনায় ২শ’ ছাড়ানো লক্ষ্যটাও যেন কম মনে হচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচের সময় যত গড়িয়েছে লজ্জার ব্যাটিং মিলিয়ে গেছে আনন্দ। শুধু সিলেটের দর্শকদেরই নয় গোটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের আরো একবার হতাশা উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ দল। শেষ পর্যন্ত সিলেট স্টেডিয়ামে লাল-সবুজের দল প্রথম খেলতে নামার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস মিলিয়ে গেছে ৭৫ রানের হারে।  ওয়ানডে ও টেস্টের পর টি-টোয়েন্টি জিরিজের শিরোপাও টাইগারদের ডেরায় এসে ছিনিয়ে নিয়ে গেল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শ্রীলঙ্কা। ত্রিদেশীয় সিরিজে তিনটি জয় ও টেস্টে একটি ড্র’র সান্ত্ব্তনা হয়ে থাকলেও শেষ বেলায় টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশে বহুগুণে বেড়ে গেছে হতাশার যন্ত্রণা। সেইসঙ্গে বার্তা দিয়ে গেল কঠিন ভবিষ্যতেরও।
সিলেট স্টেডিয়ামে টাইগারদের প্রথম ম্যাচ। তাই ছিল বিশেষ সব আয়োজন। বিশেষ কয়েনে টসটাও জিতে নিল বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ লঙ্কাকে ছুড়ে দিলো ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ। প্রথম ম্যাচে নিজিদের টি- টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৯৩/৫ রান করেও হেরেছে। তাই সিলেটের ব্যাটিং উইকেটে লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু আবারও বোলাররা দারুণভাবে ব্যর্থ। সাকিববিহীন স্পিন বোলিং আক্রমণে ছিলনা কোন ধার। আর মাশরাফি বিন মুর্তজা টি-টোয়েন্টি ছাড়ার পর পেস বিভাগের তেজটাও উধাও। তাতেই ভিত গড়ে দিলেন দুই ওপেনার কুসল মেন্ডিস ও দানুশকা গুণাথিলাকা। এরপর ক্রিজে যেই এসেছে ঝড় তুলেই হেটেছেন ২শ’র পথে।  শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ২১০ রান। যা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। গত অক্টোবরে পচেফস্ট্রমে ৪ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিল ২২৪ রান। এছাড়াও লঙ্কানরা বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ৫ উইকেটে করা সর্বোচ্চ ১৯৮ রানের রেকর্ডটাও ভেঙে দিলো।
এত বড় লক্ষ্যের পরও হাল ছাড়েননি সিলেটের দর্শকরা। কিন্তু হাল ছেড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দলে ফিরে প্রথম ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো সৌম্য সরকার এ ম্যাচে সঙ্গী হিসেবে ফের পেয়েছিলেন তামিম ইকবালকে। তাই উড়ন্ত শুরুর আশা ছিল। কিন্তু বল উড়িয়ে মেরে মেরে লঙ্কানদের জয়ের নিশানই যেন উড়ালেন তারা। শুরুটা করলেন সৌম্য। দ্বিতীয় ওভারে আকিলা ধনঞ্জয়ার অনেক বাইরের বল তাড়া করতে ব্যাটে ছুঁয়ে আকাশে তুলে দেন। পয়েন্টে ক্যাচ নিতে ভুল করেননি মেন্ডিস। চার বলে  খেলে নিজের নামের পাশে নেই কোনো রান। তারপর প্রথম ম্যাচে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিকুর রহীম ক্যাচ উড়িয়ে মেরে  ক্যাচ অনুশীলন করালেন পেরেরাকে। এবার তিন বলে নামের পাশে যোগ হয়েছে শুধু ৬ রান। ২০১৬ পর দলে ফিরা মোহাম্মদ মিঠুনও অনুসরণ করলেন আগের দু’জনকে। তবে তিনিও ক্যাচ তুলে দিলেন মেন্ডিসকে। ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা তামিম লড়ছিলেন। কিন্তু নিজের ২৪ রানের সময় তারও লঙ্কানদের ক্যাচ প্র্যাকটিস করানোর ইচ্ছা হলো। বল উড়িয়ে তুলে দিলেন ধনঞ্জয়ার হাতে। ৬৯ রানে ৪ উইকেট বিলিয়ে দর্শকদের হোয়াটওয়াশ হওয়ার বার্তাটা দিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহর দল।
তাই হারের ব্যবধানটা কমাতে একাই লড়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক। চতুর্থ উইকেটে তামিমের সঙ্গে তার করা ৩৭ রানের জুটি কিছুটা হলেও মান রক্ষা হয়েছিল। তাই আরিফুল হককে নিয়ে চেষ্টা করলেন। অভিষেক ম্যাচে ব্যাট হাতে নামলেও খেলার জন্য মাত্র এক বল পেয়েছিলেন। আর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মান রক্ষার দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি আরিফুল হক। তিনি অবশ্য বাজে শটে আউট হননি। লেগ স্পিনার জীবন মেন্ডিসের বলের লাইন বুঝতে না পেরেই মাশুল দিয়েছেন এলবিডব্লিউ হয়ে। তবে বোলিংয়ে ব্যর্থ সাইফউদ্দিন অধিনায়ককে সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করলেন। ৪২ রানের জুটি গড়ে সফলও হলেন। কিন্তু ধৈর্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষায় তার পাস নম্বর ৪১ রান। তালগোল পাকিয়ে হয়েছেন রানআউট। এরপর সাইফউদ্দিন ২০, মেহেদী ১১, মোস্তাফিজ ৮ করে লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত আবু জায়েদ ২ রানে আউট হতেই রচিত হয়ে গেল নতুন বছরের শুরুতেই হতাশার পাণ্ডুলিপি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status