শেষের পাতা

ব্লুমবার্গকে বিক্রম লিমা

ভারতীয় রেকর্ড ভালো

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

চীনের স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাস্ত করে ভারতের বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ কেনো ২৫ শতাংশ স্টেক কিনতে চাইছে তার  কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বিক্রম লিমা। গত বৃহস্পতিবার ব্লুমবার্গকে দেয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে মি. বিক্রম বলেছেন, বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের বিকাশে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। কারণ এ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ও ট্র্যাক রেকর্ড ভালো।
ব্লুমবার্র্গের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে টেলিফোনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান বলেছেন, চীনের শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ২৫ শতাংশ শেয়ার ক্রয়ে শেয়ার প্রতি ২২ টাকা অফার করেছে। এটা ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ-এর শেয়ার প্রতি ১৫ টাকা অফার করার চেয়ে বেশি। এই বিষয়ে ভারত না চীনের অফার গ্রহণ করা হবে, সেই বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ আগামী ১৯শে ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসবে।
মি. বিক্রম বলেছেন, ভারতের অনুকূলে সিদ্ধান্ত লাভের প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে এবং আমরা আশাবাদী যে, এটা আমরা পাবো। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। আমরা আশা করি যে, এই সম্পর্ক পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অবদান রাখতে আমাদের সাহায্য করবে।
ব্লুমবার্গ রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, দক্ষিণ এশীয় স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর উপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের প্রতিকূলে একটা ভারসাম্য আনতে ভারত চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চায়না ফিন্যান্সিয়াল ফিউচার্স এক্সচেঞ্জ কোম্পানি, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ, শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জ এবং আরো দুটি স্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ-এর ৪০ শতাংশ স্টেক কিনে নিয়েছে। ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ ভারতে পুঁজিবাজারের ৮০ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে।
গত বুধবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান টেলিফোনে বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে যে অফারটি সর্বোচ্চ ও শ্রেষ্ঠ সেটাই আমরা বেছে নেব।
উল্লেখ্য যে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর বোর্ড শুরুতে চীনা প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। এই তথ্য দিয়ে ফোর্বস ডটকম-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির ফিন্যান্সিয়াল রেগুলেটারি কমিশন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওই অনুমোদন সত্ত্বেও ভারতের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়ার একটা ঝোঁক প্রকাশ করেছে। এর ফলে এ বিষয়টি দুই এশিয়ান জায়ান্টের মধ্যে আরেকটি ক্ষমতার খেলা হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ দেশটির বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জের “ডিমিউচুয়ালাইজেশন” অনুমোদন দিয়েছিল। যখন কোনো দেশের স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচুয়ালাইজড করা হয়, তখন সাধারণত পুঁজিবাজারটি অমুনাফাভোগী সত্তা থেকে মুনাফাভোগী সত্তায় পরিণত হয়। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের আড়ালে আরো একটি লক্ষ্য ছিল, ব্যবস্থাপনা থেকে
মালিকানা সত্তা পৃথক করা। আর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওই ডিমিউচুয়ালাইজেশন পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই স্টক এক্সচেঞ্জের অধিকতর আধুনিকায়নের লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত সমর্থন এবং কারিগরি সহায়তা লাভের উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রধানত বৈদেশিক স্টক এক্সচেঞ্জ, যাদের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে, তাদের কাছে এক চতুর্থাংশ স্টেক বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয়। সুতরাং এতে কোনো বিস্ময় নেই যে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ড লাভজনক বিবেচনায় সাংহাইভিত্তিক কনসোর্টিয়ামকেই স্বাগত জানিয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, চীনের সাংহাই এবং শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ বিশ্বের মধ্যে যথাক্রমে পঞ্চম এবং অষ্টম বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে পরিচিত। আর তারা যৌথভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ২৫ শতাংশ স্টেক কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী চীনা অফারের মধ্যে কেবল প্রতিটি শেয়ার ২২ টাকা করে কেনাই শুধু নয়, তারা সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা দিতে ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি কারিগরি সহায়তা প্রস্তাবও যুক্ত করেছে। চীনা পার্টি অবশ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডের একটি সদস্যপদও দাবি করেছে। এমনকি বাংলাদেশের কাছে তারা তাদের প্রস্তাবকে আকর্ষণীয় করতে এটাও বলেছে যে, তারা যে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে, তার বিপরীতে প্রথম টানা দশ বছর তারা কোনো মুনাফার দাবি করবে না। অথচ এর বিপরীতে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ শেয়ার প্রতি ১৫ টাকা প্রস্তাব করার মধ্য দিয়ে গড়ে চীনা প্রস্তাবের তুলনায় ৪৭ ভাগ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করেছে। যদিও ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামগ্রিক আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার বিষয়ে একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু তারা তাদের সেই অফার প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত থেকেছে। উপরন্তু তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডে দুটি আসন দাবি করেছে, যা তারা পাঁচ বছর পরে পরিত্যাগ করবে।
ভারতীয় লবি
চীনা প্রস্তাব যখন স্পষ্টতই ভারতীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের যথেষ্ট ব্যাপকতায় হটিয়ে দিয়েছে, তখনো ভারত ‘বিনাযুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনী’ না ছাড়ার পণ করেছে। গত রোববার বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে ঢাকায় উড়ে এসেছিলেন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সিইও বিক্রম লিমা। তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। তিনি তাদেরকে এই মর্মে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে, “স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ বেশি অভিজ্ঞ।” যদিও একটি বাংলাদেশি মিডিয়া আউটলেটের রিপোর্ট অনুযায়ী লিমার বৈঠক পুরোপুরি ফলপ্রসূ হয়নি। কমিশন বিক্রম লিমার সফরের পরপরই পুরো দরপত্র প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দিয়েছে। কমিশনের ওই উদ্যোগ অবশ্য অনেককেই বিস্মিত করেছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এর সমালোচনা করেছে। সামাজিক মিডিয়ায় বিষয়টিকে এভাবে দেখা হয়েছে যে, দিল্লিকে অসন্তুষ্ট না করতেই কমিশন ওই নির্দেশনা দিয়েছে। ভারত বাংলাদেশ সরকারের বৃহত্তম রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। যদিও বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্রমবিকাশমান। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এবং তার সফরকালে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছিল।
ফোর্বস রিপোর্ট অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা ছাড়া কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারীকে কার্যাদেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবে না কমিশন বা স্টক এক্সচেঞ্জ। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার কেউ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। শুধু স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এই মর্মে মন্তব্য করেছেন যে, চীনা কনসোর্টিয়াম এই কাজ পেলে তার কোনো সমস্যা হবে না। তিনি একই সঙ্গে বলেন, দুই বিনিয়োগকারী স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষে থাকলে সেটা উত্তম। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ বেইজিং ও দিল্লি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status