বিশ্বজমিন
রোহিঙ্গা নিধন
মিয়ানমারের এক মেজর জেনারেলের বিরুদ্ধে কানাডার অবরোধ
মানবজমিন ডেস্ক
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংস নির্যাতনে নেতৃত্ব দানকারী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর একজন শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মুয়াং মুয়াং শোয়ে’র বিরুদ্ধে টার্গেটেড অবরোধ আরোপ করেছে কানাডা। এ বিষয়ে শুক্রবার কানাডা একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড ওই অবরোধ ঘোষণা করেছেন তার দেশের ‘জাস্টিস ফর ভিকটিম অব করাপ্ট ফরেন অফিসিয়ালস অ্যাক্টের’ অধীনে। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে যখন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তখন চুপচাপ বসে থাকতে পারে না কানাডা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন প্রেস টিভি। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনে সেদেশের শীর্ষ স্থানীয় সেনা কর্মকর্তার জোরালো ভূমিকা ছিল। ওই নৃশংসতা ও নির্যাতনের কারণে কমপক্ষে ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ কারণে এই অবরোধ। বিবৃতিতে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যারা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ কানাডা। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সব শ্রেণির মানুষের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে বাধ্যবাধকতা রয়েছে মিয়ানমারের বেসামরিক ও সামরিক নেতাদের। পাশাপাশি যারা ওই নৃশংসতার জন্য দায়ী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতেই হবে এবং এক্ষেত্রে তারা দায়বদ্ধ। প্রেস টিভির রিপোর্টে বলা হয়েছে, কানাডার এই অবরোধের আওতায় ওই সেনা কর্মকর্তার যেসব সম্পদ কানাডায় রয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে কানাডা। এর আগে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতি নিধনে নেতৃত্ব দানকারী বা চার্জে থাকা মিয়ানমারের এই জেনারেলের বিরুদ্ধে ডিসেম্বরে অবরোধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, মেজর জেনারেল মুয়াং শয়ে রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযান তত্ত্বাবধান করেছিলেন। তিনিই সেখানে রোহিঙ্গা বেসামরিক সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু বিদেশী সেনা সদস্যের যে তালিকা করেছে তার মধ্যে জেনারেল মুয়াং শোয়ে অন্যতম। উল্লেখ্য, ২৫ শে আগস্ট রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে আছে বিশ্ববাসী। প্রামাণ্য হিসেবে রিপোর্ট উপস্থাপনা করা হয়েছে। সর্বশেষ গণহত্যার ডকুমেন্টারি রিপোর্ট করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কিন্তু মিয়ানমার অভিযোগ বার বারই অস্বীকার করছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মিয়ানমারের রাখাইনে বসবাস করলেও নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে না রোহিঙ্গাদেরকে। এমনকি তাদেরকে কোনো জাতিগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়া হয় না। তাই জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতি নিধন অভিযান শুরু করেছে। এর ফলে আগস্টের পর থেকে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়। এর ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্ত পরিষদের বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে জেনেভা থেকে অংশ নেন শরণার্থ বিষয়ক জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। তিনি বলেছেন, যেসব রোহিঙ্গা সেনাবাহিনীর দমনপীড়নে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার।