এক্সক্লুসিভ

পথশিশুদের জন্য ভালোবাসা

এনা হাসান

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:০৬ পূর্বাহ্ন

ধানমন্ডি ৩২। লেকের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই চোখে পড়বে কিছু তরুণ-তরুণী, মাটিতে চাদর বিছিয়ে পড়াচ্ছেন একদল পথশিশুকে। তাদের চারপাশ ঘিরে বিভিন্ন শ্রেণির বইখাতার ছড়াছড়ি। এই শিশুদের কেউ কাজ করে হোটেলে, কেউবা টেইলার্সে, আবার কেউ করে ফুল বিক্রি। মুক্ত আকাশের নিচে এই স্কুলটির কাছে যেতেই শুনতে পারবেন শিশুদের কণ্ঠ।
ভালোবাসা। কারো কাছে গ্রীষ্মের কড়া রোদ্দুর, কারো জন্য মিষ্টি শীতের বিকেল। আবার কারো কাছে মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো। কিন্তু এই শিশুরা এদের কাছে ভালোবাসা কী? ভালোবাসাই বা কতটা ধরা দেয় ওদের জীবনে। কাছে গিয়ে কথা বলছিলাম তাদের সঙ্গে। ঝর্ণা এবার শিশু শ্রেণিতে পড়ছে। তার স্বপ্ন সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। সবার বিনামূল্যে চিকিৎসা করবে। এইরকম হাজারো স্বপ্ন রয়েছে ছিন্নমূল এই শিশুদের। আছে স্বপ্ন পূরণেরও অবাধ্য চেষ্টা। ধানমন্ডি লেকের বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়বে এই রকম বেশ কয়েকটি স্কুল। ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত এই শিশুদের নিয়ে। নতুন ব্যাগ, বইখাতা, কলম, পেন্সিল যাবতীয় সব কিছুই শিশুদের দেয়া হচ্ছে। আদর করে কোলে তুলে শিখাচ্ছেন পড়া। শিক্ষার্থীরাও পড়াশুনা করছে মনোযোগ সহকারে।
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২, রবীন্দ্র সরোবর, ফার্মগেট, রায়েরবাজার, আগারগাঁও, মিরপুরের বেশকিছু জায়গায় রয়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল। লাল-সবুজ, একলা চলরে, পুষ্পকলি, মজার স্কুল, বৃক্ষমায়া শিশু বিকাশকেন্দ্র নানা এসব স্কুলের। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে এই ছিন্নমূল শিশুদের একটা সুন্দর আগামী উপহার দেয়ার। কোনোরকম প্রত্যাশা ছাড়া কেন এই তরুণরা কাজ করে যাচ্ছে? কিসের টানে তারা ছুটে আসছে এই শিশুদের পাশে? ‘আসলে ভালোবাসা থেকেই ওদের পাশে থাকা। আগে যখন কলজে পড়তাম তখন থেকেই আমার একটা ইচ্ছা ছিল ওদেরকে নিয়ে কাজ করার। খুব খারাপ লাগতো যখন দেখতাম ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভিক্ষা করছে। রাস্তার পাশে খাবারের দিকে চেয়ে আছে। ক্ষুধার্ত, কিন্তু খেতে পারছে না। খুব কষ্ট হতো। সেই জায়গা থেকেই প্রথমে তিনজন মিলে ওদের জন্য কাজ শুর করা। ২০০৯ দিকে প্রথমে ফাউন্ডেশন তারপর ২০১২ দিকে স্কুল গঠন করা। শুরুর দিকে লাল-সবুজ স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা কম হলেও এখন এর সংখ্যা ৪০ এর বেশি। গত বছর আমাদের স্কুল থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬ জন। ওদের সবাইকে আমি অনেক ভালোবাসি। বাচ্চাগুলোর আদুরে হাসিমাখা মুখ দেখলে সারাদিনের সব কষ্ট ভুলে যাই। কথাগুলো বলছিলেন লাল-সবুজ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এ আর খান বাপ্পি। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এই শিশুদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। একই প্রশ্ন করলাম “একলা চলোরে” স্কুলের শিক্ষা দানকারী আদ্রিতা দাসের কাছে। তার মতে, “সভ্য নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়ায় আমাদের কখনো শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। ছোটবেলায় মা/বাবা ঘুম থেকে উঠিয়ে স্কুলে নিয়ে গেছেন আবার বাসায় এনেছেন। কিন্তু যে শিশুটি ১০ টাকায় একটা গোলাপ/বকুল ফুলের মালা বিক্রি করার জন্য আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, তার ভবিষ্যৎ কী? তার তো স্কুলে ক্লাস করার সৌভাগ্য হয় না, ক্লাসরুমে দুষ্টমি করারও সৌভাগ্য হয়না। পরোক্ষভাবে, আমরা কি তাদের অন্ধকার ভবিষ্যতের জন্য দায়ী হব না? এই দংশন থেকেই একলা চলরে শুরু। যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি বিনা পারিশ্রমিকে এদের পড়াচ্ছেন কেন? তাহলে উত্তর হবে, মনের আনন্দে জন্য, ভালোবাসা থেকে আর কিছুই না। আর প্রাপ্তিটাও তো কম না। দূর থেকে ছুটে এসে যখন জড়িয়ে ধরে আর কি লাগে বলেন। শুধু পড়াশুনা নয়, এইসব স্কুলে আছে শিশুদের বিকাশের জন্য নানা কার্যক্রম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি রয়েছে স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status