বাংলারজমিন

বাইক্কাবিলে ৩৮ প্রজাতির পাখির আনাগোনা

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

শ্রীমঙ্গলে হাইল হাওরের সংরক্ষিত মাছের অভয়ারণ্য বাইক্কা বিলে এবার বেশি এসেছে পাতি তিলিহাঁস (ঈড়সসড়হ ঞবধষ)। শীত মৌসুমে আসা পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে এদের সংখ্যাই সর্বাধিক।
আর মোট পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ৩৮ প্রজাতির ৫ হাজার ৪শ’ ১৮টি। এই সংখ্যার মধ্যে এক হাজার ৫শ’ ৮০টি সর্বাধিক সংখ্যা হলো পাতি তিলিহাঁসের। গত ২৪ থেকে ২৮শে জানুয়ারি এ তিন দিনব্যাপী বাইক্কা বিলে অনুষ্ঠিত জলচর পাখি শুমারিতে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
উপজেলার হাইল হাওরের এই বাইক্কবিলের মাছের অভয়াশ্রমজুড়ে কেবলই পাখির আনাগোনা-কলতান, পানিতে ডানা ঝাঁপটানোর শব্দে পাখি দেখতে আসা দর্শকরা মুগ্ধ হয়। এমন দৃশ্য দেখতে আসেন অনেকেই। অবসর সময়ে পাখি দেখে সময় কাটে আগত দর্শকদের। একটু উষ্ণতার খোঁজে প্রতি বছরই ঝাঁকে ঝাঁকে আসে অতিথি পাখি। শীতের তীব্র কুয়াশার চাদর গায়ে জড়ানো এসব পাখি মেতে ওঠে জলকেলিতে, ছন্দময় ডানা ঝাঁপটানোয়। হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে বিচিত্র রং আর নানা প্রজাতির এসব পাখি আসতে শুরু করে নভেম্বরের শুরুতে। আপন নীড়ে ফেরে গ্রীষ্মের শুরুতে। আবার গাছে গাছেও মেলা বসে এসব পাখির। কলতানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা হাওর এলাকা।
স্থানীয় বাসিন্দা মিন্নত আলী জানান, সুদূর সাইবেরিয়া ও হিমালয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শীতের শুরুতে প্রতিবছর ঝাঁকে ঝাঁকে আসে নানা প্রজাতির পাখি। তাদের নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে এ দেশের আতিথ্য নিতে ছুটে আসে বিভিন্ন হাওর, বিল ও জলাশয়ে। এবার আসা অতিথি পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজসরালি, লেঞ্জা হাঁস, সাদা বক, কাস্তে চড়া, বালি হাঁস, পাতি তিলি সরালি হাঁসের, পানকৌড়িসহ আরো অনেক প্রজাতি।
হাইল হাওরে কর্মরত স্থানীয় ক্রেল প্রজেক্টের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ক্রেলের প্রজেক্টের সহযোগিতায় গত ২৪-২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পক্ষ থেকে তিনদিনব্যাপী বাইক্কা বিলে একটি বার্ড সার্ভে করা হয়। এতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজারের উপরের পরিযায়ী পাখি দেখা যায়।
গত বছরের পরিসংখ্যান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে পাখি শুমারিতে বাইক্কা বিলে ৪১ প্রজাতির ১০ হাজার ৭শ’ ১৩টি পাখি পাওয়া গিয়েছিলো। এর আগে ২০১৬ সালে পাওয়া গিয়েছিলো ৩১ প্রজাতির ৮ হাজার ৮শ’ ৩১টি পাখি। তবে এবার পাখি শুমারিতে গত বছরের তুলনায় কম পাখির দেখা পাওয়া গেছে।
পাখির সংখ্যা হ্রাসের কারণ বিষয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, গত বছর সববিলেই তার আগের বছরের চেয়ে বেশি পাখি পাওয়া গিয়েছিলো। এ বছর হাওরগুলোতে গত বছরের চেয়ে কমসংখ্যক পাখি আছে। প্রতিবছরই পাখির সংখ্যা উঠা-নামা হচ্ছে। তাই ঠিক ওইভাবে বলতে পারবো না যে, অনবরত কমেই যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর জানুয়ারির শেষে বাইক্কা বিলে গিয়ে ‘পাতি তিলিহাঁস’ বেশি পেয়েছি। ফেব্রুয়ারিতে পাখি শুমারি করলে হয়তো অন্য একটি প্রজাতির হাঁস বেশি পাওয়া যেতো। পাতি-তিলিহাঁসগুলোকে জানুয়ারিতে যেভাবে বেশি সংখ্যায় দেখা যায়, তেমন ফেব্রুয়ারিতে দেখা যায় না। পানি কমলে-বাড়লে একেক হাঁসের সুবিধে হয়, আবার একেক হাঁসের অসুবিধেও হয়। সে অনুযায়ী ওরা অবস্থান করে কিংবা অন্যত্র সরে যায়। হাইল হাওরে কর্মরত স্থানীয় ক্রেল প্রজেক্টের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, পাখিদের অভয়ারণ্য ও এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল হওয়ায়, স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে নিয়মিত অনেক পর্যটক আসেন।
তারা পাখি দেখে অনেক আনন্দ পান। তবে, বিলে পাখি শিকারের কারণে পাখির সংখ্যা দিন দিন কমেছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি জানান, এখানে চমৎকার পাখির সমাবেশ। পাখির কলকাকলি বা পাখির যে সমাবেশ তা বলে বুঝানো যাবে না। নিরাপদ আশ্রয়ে আসা অতিথি পাখি নির্ভাবনায় মেতে উঠেছে জলকেলি আর ডুবসাঁতারে। কখনো তারা ঝাঁকে ঝাঁকে চক্রাকারে উড়ে বেড়াচ্ছে হাওরের আকাশজুড়ে। পাখিদের অবিরাম খুনসুটি, ডানা ঝাঁপটে দলবেঁধে উড়ে চলা আর ডুবসাঁতার দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা নামে, তা বুঝতেই পারে না অনেকেই।
শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ ও শিকার বন্ধে প্রশাসন বরাবরই তৎপর রয়েছে। এছাড়া অতিথি পাখিদের যাতে শিকারীরা শিকার করতে না পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা স্থানীয় প্রশাসনকে দেয়া আছে বলে জানালেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status