এক্সক্লুসিভ

ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

রোববার রাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো বন্ধ থাকবে ইন্টারনেট সংযোগ। এর কয়েক ঘণ্টা পরই সিদ্ধান্ত বদল। প্রত্যাহার করে নেয়া হলো ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক ইস্যুতে দুই ধরনের সিদ্ধান্তর পেছনে সরকারের দুই মতকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। রাতে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি)  বার্তা দেয়া হয় ইন্টারনেট বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে। নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই উদ্যোগ নেয় বিটিআরসি। তারা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দ্রুত চিঠি পাঠায়। বিষয়টি অতি জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নেরও তাগাদা দেয়া হয়। এরই আলোকে রোববার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখা হয়। সাড়ে দশটার পরে ইন্টারনেট ফের সচল হলে সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় তথ্য-প্রযুক্তি কর্মীরা। এছাড়া সফ্‌টওয়্যার রপ্তানিকারকদের সংগঠন বেসিস, কল সেন্টার ও আউটসোর্সিং এসোসিয়েশন বাক্যসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কাজের সঙ্গে জড়িতরা সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে ইন্টারনেট সেবা সচল রাখার অনুরোধ জানায়। কয়েক ঘণ্টা পরই সরকারের পক্ষ থেকে আবারও নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়। সরকারের দুই মতের কারণে ইন্টারনেট নিয়ে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানান বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। গতকাল টেলিফোনে এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করি। সিদ্ধান্ত নেয়া ও পরে তা বদল করার বিষয়ে সরকারই ভালো বলতে পারবে। বিটিআরসি’র কয়েক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত নানা ঘটনা ঘটেছে। একবার বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আবার সাময়িক স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। পরে আবারও বন্ধের নির্দেশনা প্রত্যাহার করতে  বলা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা প্রায় দৌড়ের মধ্যে ছিলাম। চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষা শুরুর দুই ঘণ্টা আগে থেকে মোট দুই ঘণ্টা সময় ইন্টারনেটে ধীর গতি রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা পর পর্যন্ত (সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত) ইন্টারনেট ধীর গতিতে চলবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে দেশের সব আইআইজিকে (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) এই নির্দেশ পাঠানো হয়। আইএসপি ও মোবাইল অপারেটরগুলোতে ২৫ কেবিপিএস (কিলোবিট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ সরবরাহের কারণে কার্যত বন্ধই ছিল ইন্টারনেট। এ সময় কোনো ওয়েবসাইটে ঢোকা যায়নি। কিছু সার্চ দিলেও ওয়েবপেজগুলো কেবল ‘লোডিং’ দেখায়। পরে সোমবার সকালে বিটিআরসি থেকে জানানো হয়, ইন্টারনেটে ধীর গতি রাখার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেটা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান,ইন্টারনেট বন্ধ রাখলে অনলাইন সিস্টেম অকার্যকর হয়ে যায়। ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড কম্পিউটিং বন্ধ থাকে। এসব আমাদের দেশের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসব বিবেচনা করেই হয়তো সরকার ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। রাতে পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল বলে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। সকালে বন্ধ থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতো এবং বিদেশিরা আমাদের ওপর থেকে আস্থা হারাতে শুরু করতো। তারা জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে কল সেন্টার বন্ধ করে দিতে হবে। আউটসোর্সিং বন্ধ হয়ে যাবে। এসব আমাদের দেশের ইমেজকে একেবারে তলানিতে নিয়ে যাবে। বিদেশিরা আমাদের কলসেন্টার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আমরা মনে করি, সরকার এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ডিজিটাল ব্রান্ডিংয়ে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করেছে। ভবিষ্যতে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ কওে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেবে না বলে প্রত্যাশা করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, ইন্টারনেটের গতি কম বা বন্ধ রাখা হলে অফিসের করপোরেট যোগাযোগ বিঘ্নিত হবে, এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলায় সমস্যা দেখা দেবে। এছাড়া অ্যাপস নির্ভর গাড়ি সেবা ‘উবার’, ‘চলো’, ‘পাঠাও’ ব্যবহার করা যাবে না, ই-কমার্স সেবা বন্ধ থাকবে, ব্যাংকের সার্ভার চালু করতে না পারার মতো (ফলে লেনদেন দেরিতে শুরু হবে) ঘটনা ঘটতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status