ঢাকা, ১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পিয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে
৫ মে ২০২৪, রবিবার
mzamin

গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন কৃষকের ঘরেই পিয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) গবেষকদের গবেষণার ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে পিয়াজের ওজন হ্রাস, পচন, স্পাউটিং কমিয়ে আনা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।  কয়েক বছর ধরে বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ রসুন, আলু, আম, কলা, পটোল, করলাসহ অন্যান্য পচনশীল উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলে গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যম সংরক্ষণকাল বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন গবেষণা করে সাফল্য পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার পিয়াজ নিয়ে পরীক্ষাতেও সাফল্য এসেছে। গবেষকরা বলছেন, রেডিয়েশন প্রয়োগ করে প্রায় ৭-৯ মাস পর্যন্ত কৃষক নিজ ঘরে পিয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবে। এতে বাংলাদেশে পিয়াজের আমদানি নির্ভরতা কমবে, বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হবে এবং পিয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। গবেষক দলে ছিলেন- বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রফিকুল ইসলাম ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাসরীন আখতার।

 গবেষকরা জানান, বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ ২০২০ সাল হতে পোস্টহারভেস্ট গবেষণাগারে বিভিন্ন ডোজ গামা রশ্মি প্রয়োগ করে বিভিন্ন পরীক্ষণ করেছে এবং বিভিন্ন ফসলের সংরক্ষণের জন্য গামা রেডিয়েশন ডোজ নির্দিষ্ট করেছে। পিয়াজের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ১০০ গ্রে ডোজে গামা রশ্মি প্রয়োগের ফলে শতভাগ পিয়াজের গাছ গজানো বন্ধ হয়েছে। ফলে পিয়াজের ওজন হ্রাস ও পচন কম হচ্ছে এবং পিয়াজের গুণগতমান বজায় রেখে নিজ ঘরের তাপমাত্রায় ৭-৮ মাস সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
পরীক্ষণটি ভালোভাবে যাচাই করার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিভিন্ন জেলায় কৃষকের নিজ ঘরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাষকৃত পিয়াজের দু’টি জাত তাহেরপুরী ও লালতীর কিং নির্দিষ্ট মাত্রায় (১০০ গ্রে) গামা রশ্মি প্রয়োগ করে এবং রেডিয়েশন প্রয়োগ ছাড়া পিয়াজকে জুলাই ২০২৩ থেকে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত মাচায় সংরক্ষণ করা হয়। ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাসরীন আখতার জানান, পরীক্ষণের ফলাফলে দেখা যায় গামা রশ্মি প্রয়োগের ফলে পিয়াজের দু’টি জাতই গাছ গজানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়েছে, পচার হার কম হয়েছে এবং ওজন মোটামুটি ঠিক আছে। অন্যদিকে যেসব পিয়াজে রেডিয়েশন প্রয়োগ করা হয়নি সেখানে শতভাগ গাছ গজিয়েছে, ওজন হ্রাস ও পচন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় পিয়াজ চাষি আনন্দ সাহা জানান, তারা উক্ত প্রযুক্তি দেখে খুবই আশাবাদী, এমন প্রযুক্তির সুবিধা যদি কৃষক পর্যায়ে পাওয়া যায় তাহলে তারা খুব সহজে দীর্ঘ সময় নিজ ঘরে পিয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। প্রতিবছর হাজার হাজার টাকার পিয়াজ পচে যাওয়ার লোকসান থেকে রেহাই পাবেন এবং কৃষকেরা পিয়াজ চাষে আরও উৎসাহিত হবেন। পরীক্ষণটি দেখে এলাকার পিয়াজ চাষিরা খুবই অবাক হয়েছে। 

ঈশ্বরদী উপজেলার চাষি মো. মতিউর রহমান জানান, পরীক্ষণ শেষে তারা নিজ ঘরে রান্নার কাজে পিয়াজ ব্যবহার করছেন এবং পিয়াজের স্বাদ, গন্ধ ও ঝাঁজ অক্ষুণ্ন আছে। রংপুর সদর উপজেলার কৃষক মো. আব্দুল বারেক জানান, এ পরীক্ষণ দেখে তারা খুবই খুশি এবং এ প্রযুক্তি পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। বিনা উপকেন্দ্র রংপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলী জানান, পিয়াজ চাষিরা এ প্রযুক্তি পাওয়ার জন্য খুবই আগ্রহী। বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, কৃষকদের কথা মাথায় রেখে বাণিজ্যিকভাবে রেডিয়েশন প্রয়োগ করার জন্য বিশ্বব্যাংকের পার্টনার প্রকল্পের আওতায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিনা আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুরে গামা সেন্টার স্থাপন করার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

 এ সেন্টারে গামা ইরাডিয়েটর দিয়ে কম খরচে পিয়াজ, রসুন, আদা, আলু, আম, কলাসহ অন্যান্য সবজি ও মসলাসহ পচনশীল উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য যেমন জ্যাম, জেলি, আচার, সস, জুস ইত্যাদিতে রেডিয়েশন প্রয়োগ করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) রেডিয়েশন প্রয়োগকৃত খাদ্যকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকরী প্রক্রিয়া বলে অনুমোদন দিয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) বিকিরণযুক্ত খাবারের নিরাপত্তাকে সমর্থন করেছে। তিনি আরও জানান, এদেশে উচ্চ তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতার কারণে কৃষকরা পিয়াজ নিজ ঘরে ২-৩ মাস সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। ফলে পরবর্তী পর্যায়ে কৃষককে উচ্চ মূল্য পিয়াজ ক্রয় করতে হয় এবং দেশে পিয়াজ আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে রেডিয়েশন প্রয়োগ করে প্রায় ৭-৯ মাস পর্যন্ত কৃষক নিজ ঘরে পিয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবে। এতে বাংলাদেশে পিয়াজের আমদানি নির্ভরতা কমবে, বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হবে এবং পিয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।

পাঠকের মতামত

Need to test it in the field level and establish Gama Center in each district.

mamun
৫ মে ২০২৪, রবিবার, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status