ঢাকা, ১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

সাক্ষাৎকার

আত্মীয় কালচার ভয়ঙ্কর, এটি পরিবর্তন করতে হবে

মরিয়ম চম্পা
৪ মে ২০২৪, শনিবার
mzamin

আব্দুর রহমান। স্কুল জীবনেই রাজনীতির হাতেখড়ি। ছিলেন প্রতিবাদী স্বভাবের। ফরিদপুরের পাড়াগাঁ থেকে উঠে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে  নানা পথ পাড়ি দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর মূল দল আওয়ামী লীগে নানা দায়িত্ব পালন শেষে এখন প্রেসিডিয়াম সদস্য। মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। নিজের মন্ত্রণালয় নিয়ে পরিকল্পনা, রাজনীতি ও সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে একান্তে কথা বলেছেন মানবজমিন-এর সঙ্গে। 

জানিয়েছেন, প্রাণিজ আমিষের দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তার মন্ত্রণালয়। এজন্য নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর যে আস্থা রেখেছেন তার সঠিক প্রতিদান দিতে চান কাজের মাধ্যমে। পাশাপাশি রাজনীতিতেও রাখতে চান ইতিবাচক ভূমিকা। 

দীর্ঘ রাজনীতির ক্যারিয়ারে প্রথমবার মন্ত্রী হলেন, অভিজ্ঞতা কেমন? আব্দুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে তো কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
হয়তো সেটা বেশি পরিপক্ব নাও হতে পারে। আমার অভিজ্ঞতা কেমন সেটা তো আমি বলতে পারবো না। তবে সবসময় মনে করি যে যা কিছুই আমি করি এর প্রতিটি কাজের মধ্যে আমার বড় ভাবনা যেটা থাকে তা হলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতির অঙ্গীকারকে সামনে রেখেই চিন্তা করা। এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শর্তহীন আনুগত্য ভেতরে পোষণ করি। 
তিনি বলেন, এমন একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আমাকে প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন যার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের খেদমত করার সুযোগ রয়েছে এবং সেটি আমার জায়গা থেকে যথেষ্ট আন্তরিক। যাতে এই কর্মজজ্ঞটি নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পারি। 

মন্ত্রণালয় নিয়ে দীর্ঘ কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই। দীর্ঘ পরিকল্পনার অর্থ হলো আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। সুতরাং ভাতের সঙ্গে আমাদের পুষ্টি ও আমিষ জাতীয় খাদ্য শরীরের জন্য প্রয়োজন এবং অপরিহার্য বিষয়। সেই স্থান থেকে পুষ্টিতে আমরা সমৃদ্ধ হবো, আমিষ জাতীয় খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো এবং ধীরে ধীরে আমাদের নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার চিন্তা ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাবো। 

তিনি বলেন, এখন অন্ততপক্ষে আমাদের গবাদিপশু থেকে নিজস্ব চাহিদা মেটানো সম্ভব। সুতারং এটি আমাদের একটি অর্জনের জায়গা এবং এটাকে একটি সলিড ও সিকিউরড জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। এখান থেকে বৈদেশিক রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। 

মন্ত্রণালয়ে কী পরিবর্তন আনতে চান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ইলিশ উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম। ইলিশ রপ্তানিতে কতোগুলো চ্যালেঞ্জ আছে তার মধ্যে জাটকা না ধরার ক্ষেত্রে আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। জাটকা ধরা যাবে না। মা ইলিশকে বড় হতে দিতে হবে। সেই পদক্ষেপ আমরা জোরদার করছি। আরেকটি হলো-কৃত্রিম জাল (চায়না জাল) যেটা অবৈধ পথে আসে। সেটা নিধন প্রক্রিয়ায় নেমে অনেকটাই সফল হয়েছি। এই জালের ব্যবহার একদমই নির্মূল করা হবে। সেই ম্যাসেজ ইতিমধ্যে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশি ও মিঠা পানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। 

সম্প্রতি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় একটি মন্দিরে অগ্নিকা- ও আগুন দেয়ার সন্দেহে মারধরের ঘটনায় দুই শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। অপ্রত্যাশিত। এটা যেহেতু তদন্তাধীন বিষয় সুতরাং এনিয়ে বেশি বললে আইনের অবমাননা হবে। এতটুকু বলতে চাই, ঘটনাটি শুধুমাত্র আমি নই, জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, বিডিআর মনিটরিং করছে। এলাকার সাধারণ মানুষ সকলেই এ ঘটনায় মর্মাহত এবং যারা এই ঘটনাটি সংঘটিত করেছে তাদেরকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে নতুন করে যেন না ঘটে সে বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি।   

উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আত্মীয়-স্বজনদের কালচারটি ভয়ঙ্কর। এটা পরিবর্তন করতে হবে। এটা ডার্টি চিন্তা-ভাবনা। এতে করে ক্ষমতা করায়ত্ত করা হয়। এর মানে হলো এগুলো অন্য মতলব থেকে করা। এটা না থাকাই ভালো। বারবার মেসেজ দেয়া হচ্ছে মন্ত্রী এবং এমপিদের আত্মীয়-স্বজনরা যেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে না দাঁড়ায়, অনেকেই সেই অবস্থান থেকে ফিরে এসেছেন। যারা আসেননি তাদের বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে। 

সার্বিকভাবে গত জাতীয় নির্বাচনকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, একজন যদি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া এবং ক্ষমতা গ্রহণের গ্যারান্টি চেয়ে শর্ত জুড়ে নির্বাচনে আসতে চায় সেটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনে কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না আমাকে বিজয়ী করো আমরা সরকার গঠন করবো। সুতরাং একজন যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে কি সেই নির্বাচনের যাত্রা বন্ধ হয়ে যাবে। অতএব, বিগত নির্বাচনটি আমি মনে করি একটি কঠিন এবং প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে। তাই এই নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন চিন্তা বা ভিন্নভাবে কথা বলা অনুচিত। একটি নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে যে সংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণ দরকার, সেটা ছিল। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এরচেয়ে কম ভোটেও তারা নির্বাচিত হয়। 

তিনি বলেন, রাজনীতি নিয়ে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে একটিই মেসেজ থাকবে আমার, বঙ্গবন্ধু যে অসম্প্রদায়িক রাজনীতির চেতনার ভিত্তিতে এই দেশকে স্বাধীন করেছেন সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশটিকে অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে রক্ষা করার জন্য তাদের দায়িত্ব নেয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার টার্গেট দিয়েছেন সেই দেশ গড়ার লক্ষ্যে তাদের অংশগ্রহণ করা উচিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের তুলনায় অনেক বেশি স্মার্ট। তাদের এই রাজনৈতিক প্রলেপটি যদি থাকে তাহলে আমাদের যে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য রয়েছে তাতে তারা উদ্বুদ্ধ হবে। শক্তি হিসেবে কাজ করবে। 

আব্দুর রহমান ১৯৬৯ সালে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ড. সামসুজ্জোহা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নিজের স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় অংশ নেন। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। সেখান থেকে ফিরে সরকারি কলেজে ভর্তি হন। ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ হিসেবে প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশ নেন। সেখানে দীর্ঘদিন ছদ্মবেশে কাজ করেন। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৮১ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ৮৩-৮৪ সালে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৮৬ সালে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের প্রথম পর্যবেক্ষক সদস্য হয়ে মূল দলে রাজনীতি শুরু করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সর্বশেষ প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। 

পারিবারিক বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার পরিবারের কেউ রাজনীতিতে ছিলেন না। আমার বাবা একজন ধার্মিক মানুষ। তিনি গ্রামের মসজিদের ইমাম ছিলেন। ইসলামিক বিষয়ে খুব আগ্রহ ছিল। মাও খুব ধার্মিক ছিলেন। বলা যায় তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি রাজনীতিতে আসি। আমি একমাত্র ছেলে। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমি রাজনীতিতে এই দীর্ঘপথ হেঁটে এসেছি। আমার স্ত্রী একজন ডেন্টিস্ট। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিয়ে দেন। আমার ৪ সন্তান রয়েছে। বড় সন্তান লন্ডনে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। মেজ মেয়ে স্বামীর সঙ্গে সিডনিতে থাকে। ছোট মেয়ে ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করেছে এবং সবার ছোট ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি আমার বাবার মতো ধার্মিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ভবিষ্যতে তাদের কেউ রাজনীতিতে আসবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তাদের নিজস্ব বিষয়। আমার পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই।

পাঠকের মতামত

huge money eared by politics clear it....

MU
৪ মে ২০২৪, শনিবার, ৩:৪৯ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status