ঢাকা, ১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

মাঠের চিত্রে চিন্তিত আওয়ামী লীগ

কাজী সোহাগ
৪ মে ২০২৪, শনিবার
mzamin

ফাইল ছবি

প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের ৩ উপজেলা সীতাকুণ্ড, মীরসরাই ও সন্দ্বীপে আগামী ৮ই মে নির্বাচন। নির্বাচনে প্রার্থীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা। দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং বিএনপিসহ অন্য দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘গুরু-শিষ্যের’ ভোটযুদ্ধ নিয়ে চলছে আলোচনা। এ উপজেলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরে ভোটের মাঠে উত্তাপ বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি দেখে এখানেও সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। এ চিত্র প্রায় সারা দেশেই। এবারের উপজেলা নির্বাচনে মূলত আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগই।

বিজ্ঞাপন
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আওয়ামী লীগ দলীয় মন্ত্রী ও এমপিদের প্রভাব ও বলয়। দলটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মানবজমিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন নির্বাচনে মাঠের চিত্র সুখকর নয়। আমরা সংঘাতের আশঙ্কা করছি। তবে দলীয়ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে তালিকা তৈরি করে যেন সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি না হয়। এজন্য সাংগঠনিকভাবে স্থানীয় নেতাদের কাছে প্রায় প্রতিদিনই কঠোর বার্তা পাঠানো হচ্ছে। মন্ত্রী ও এমপিদের ফোন করে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। 

স্থানীয় প্রশাসনকে কেউ যেন প্রভাবিত করতে না পারে সে বিষয়টাও সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, এরইমধ্যে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে বেশির ভাগ উপজেলায় দলীয় নেতাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়েছে বলে তথ্য এসেছে। ওই বিভেদ নির্বাচনকে সহিংসতার দিকে নিতে পারে। এজন্য আগেভাগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। নেতারা জানান, এলাকার রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন। এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা। এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন। এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।

 তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে সংসদ সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে দলীয় এমপিদের সতর্ক করে তিনি বলেন, দলকে কুক্ষিগত না করে সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। এমপিদের উচিত তাদের সন্তান-স্ত্রীদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী না করা। পরিবার কেন্দ্রিক করলে চলবে না। দলকে বৃহত্তর স্বার্থে বড় করতে হবে। ত্যাগী নেতাকর্মীদের সুযোগ করে দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সবকিছু নিজের পরিবারের মধ্যে রাখা যাবে না, একাই সব জায়গায় থাকার মানসিকতা ছাড়তে হবে। আওয়ামী লীগ পরিবারকে বড় করতে হবে, দলকে নিজের কুক্ষিগত, সংকীর্ণ করে রাখলে হবে না। নির্বাচনে যেন কোনো সমস্যা না হয়, নির্বাচনটা যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সংশ্লিস্টরা জানান, সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশির ভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। 

গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন মানবজমিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। প্রার্থীগণ জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের সংবিধান অনূযায়ী জনগণই দেশের মালিক। জনপ্রতিনিধিগণ জনগণ কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার বা স্থানীয় সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। সুতরাং জনগণের সার্বভৌম মালিকানা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রযুক্ত হয়। নির্বাচন কমিশন অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। প্রার্থীগণ জনগণের দোড় গোড়ায় হাজিরা দেয়ার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা উচ্চকিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তফশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা। তবে মাঠের চিত্রে চিন্তিত হয়ে পড়েছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

পাঠকের মতামত

নির্বাচনে মারামারী হবেই সেখানে বিরোধী পক্ষ /দল্ না থাকলে সেই মারামারি নিজেদের মধ্যে হবে এটাই সত্য।

A R Sarker
৪ মে ২০২৪, শনিবার, ৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status