ঢাকা, ১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

পাকুন্দিয়ায় এমপি’র বিরুদ্ধে উপজেলার ভোটে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
৪ মে ২০২৪, শনিবার
mzamin

আগামী ৮ই মে অনুষ্ঠেয় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংস্দ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্রাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে এলাকায় অবস্থান করে একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা এবং ভোটারদের প্রভাবিত ও চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ ওঠেছে। নির্বাচনে এমপি’র এই অবৈধ হস্তক্ষেপের প্রতিকার চেয়ে কৈ মাছ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ মো. মকবুল হোসেন রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগটি জমা দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মোরশেদ আলম জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অন্যদিকে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে সংস্দ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্রাব উদ্দিন দাবি করেছেন, তিনি এলাকাতেই নেই, তাই এ অভিযোগ অমূলক। রিটার্নিং অফিসারের কাছে দেওয়া অভিযোগে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ¦ মো. মকবুল হোসেন উল্লেখ করেছেন, তার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য এডভোকেট সোহ্রাব উদ্দিন এলাকায় অবস্থান করে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন এবং ভোটারদেরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত ও চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। এমপি’র এ কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ¦ মো. মকবুল হোসেন। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার বিকালে মুঠোফোনে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এডভোকেট মো. সোহ্রাব উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকাতে আছি, এই সময়ে এলাকায় যাচ্ছি না। গত সপ্তাহে গিয়ে কটিয়াদী একটি প্রোগ্রাম করে দিনেই এসে পড়েছি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি অভিযোগ।

বিজ্ঞাপন
এদিকে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম হাবিবুর রহমান চুন্নু ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় বর্তমানে চারজন প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম রেনু (মোটর সাইকেল), একেএম দিদারুল হক (দোয়াত-কলম), আলহাজ¦ মো. মকবুল হোসেন (কৈ মাছ) এবং এমদাদুল হক জুটন (আনারস) নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। স্থানীয়ভাবে সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এমদাদুল হক জুটন (আনারস) এর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন। এমদাদুল হক জুটন এমপি সোহ্রাবের নিজ ইউনিয়ন পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এমদাদুল হক জুটন বিএনপি ঘরানার হিসেবে পরিচিত হলেও তার দলীয় কোন পদ-পদবী এমনকি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যও নন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। নির্বাচনে প্রতীক পাওয়ার পর থেকে সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে সক্রিয় প্রচার-প্রচারণায় যুক্ত রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ তুহিন এর নেতৃত্বে পাকুন্দিয়া বাজারে আনারস প্রতীকের প্রার্থী জুটনের সমর্থনে মিছিল করেছেন এমপি অনুসারীরা। এর আগে এমপি সোহ্রাবের ঘনিষ্ঠ ও তার নিজ ইউনিয়ন পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ এক নির্বাচনী কর্মী সভায় বলেছেন, গত সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্র কমিটিতে যারা ছিলেন, তারাই এবার উপজেলা নির্বাচনে জুটনের কেন্দ্র কমিটিতে থাকবেন। এমপি পক্ষের এমন প্রকাশ্য অবস্থানের পর এমদাদুল হক জুটন এমপি’র প্রার্থী হিসেবেই আলোচিত হচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বিষয়টি নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে জুটনকে এমপি সমর্থন দিয়েছেন প্রকাশ্য জনসমাবেশে এই দাবি করে চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে এমপি পক্ষ ত্যাগ করেছেন জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা মো. আতাউল্লাহ্ সিদ্দিক মাসুদ। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু’র পক্ষে অবস্থান নিয়ে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া এমপি পক্ষের সমর্থনকে ঘিরে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগারদের ভিড় বাড়ছে মোটর সাইকেল শিবিরে। তৃণমূল পর্যায়ে যারা বঞ্চিত হয়েছে, তারাই রেনু’র মূল শক্তি। ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদের মাধ্যমে রফিকুল ইসলাম রেনুকে বিজয়ী করে তারা তাদের ভাষায় ‘রাজতন্ত্র কায়েমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ’ জানাতে চান। এছাড়া আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যে রফিকুল ইসলাম রেনু’র পক্ষে কাজ করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মো. মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের একটি অংশ সাবেক এমপি ও একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত একেএম শামছুল হক শামছুল হক গোলাপ মিঞা’র ছেলে একেএম দিদারুল হকের পক্ষে মাঠে সরব রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা মো. আতাউল্লাহ্ সিদ্দিক মাসুদ বলেন, এমদাদুল হক জুটনের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কোন রকম সংশ্লিষ্টতা কোন কালেও ছিল না, তিনি বিএনপির লোক। চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দলের অনেক যোগ্য লোক থাকার পরও সংসদ সদস্য এডভোকেট সোহ্রাব উদ্দিন নির্বাচনে জুটনকে প্রার্থী করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছেন। এ পরিস্থিতিতে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী রফিকুল ইসলাম রেনু’র সঙ্গে রয়েছেন উল্লেখ করে আতাউল্লাহ্ সিদ্দিক মাসুদ বলেন, পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগকে রক্ষার স্বার্থে রফিকুল ইসলাম রেনু’র পক্ষে আমরা নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, চার প্রার্থীকে ঘিরে বিভক্ত আওয়ামী লীগের ভোটের লড়াইয়ে সংসদ সদস্য সোহ্রাব উদ্দিনের একটি পক্ষ নেয়ার বিষয়টি এতটাই স্পষ্ট যে, তার ভাবমূর্তি রক্ষা করাই এখন এমপি অনুসারীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status